Home » HS Result 2023 : ঝুমুর-কীর্তণ দলে নৃত্য ও জঙ্গলের শাল পাতা বিক্রি করে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল শালবনীর লক্ষ্মী

HS Result 2023 : ঝুমুর-কীর্তণ দলে নৃত্য ও জঙ্গলের শাল পাতা বিক্রি করে উচ্চ মাধ্যমিকে সফল শালবনীর লক্ষ্মী

by Biplabi Sabyasachi
0 comments

HS Result 2023 : Salboni Lakshmi succeeds in higher secondary by dancing in Jhumur-Kirtan group and selling jungle shawl leaves.

ওয়েব ডেস্ক, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : ঘরেতে অভাব, দু’চোখে তবু স্বপ্নের ছোঁয়া। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষাতেই সফল। কিন্তু সংসারে অভাব অনটন লেগেই আছে। সেই অভাবের বাধা পেরিয়ে যাবে বলে বদ্ধপরিকর পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর জঙ্গলমহলের লক্ষ্মী মাহাত। জয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী সে। কলা বিভাগে এবারে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৭ (সর্বোচ্চ পাঁচটি বিষয়ে পাওয়া নম্বরের মোট) নম্বর পেয়েছে।


আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ

ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন : Click Here

HS Result 2023
নিজস্ব চিত্র

বাংলায় ৮৩, ইংরেজিতে ৮৬, ভূগোলে ৯২, দর্শনে ৯৭, সংস্কৃতে ৮৬, শিক্ষা বিজ্ঞানে ৮৬ পেয়ে ভালো ফলও করেছে। তবু হতাশ লক্ষ্মী। সে জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতি না হলে আরও ভালো ফল হতো। তবে তার সাফল্যের পেছনে অবদান বিদ্যালয় ও কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের। লক্ষ্মী বলে, “বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি মুকুব করে বই খাতাও দিয়েছে আমাকে। অন্যদিকে একটি কোচিং সেন্টারে তিনটি বিষয় পড়তে যেতাম। মাস শেষে সময়ে টাকা দিতে না পারলেও কিছু বলতেন না। সবাই সাহায্য করেছেন।”

HS Result 2023

HS Result 2023
নিজস্ব চিত্র

টানাটানির সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। পরিবারের অন্ন জোটাতেই যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন বাবা-মা। সেখানে মেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালানো খুবই কষ্টসাধ্য বাবা শ্যামল মাহাতর। তবে এতো অভাব ও শত কষ্টের মধ্যে থেকেও দমে যাননি পিড়াকাটার জঙ্গল ঘেরা রঞ্জা গ্রামের ছাত্রী লক্ষ্মী মাহাত। সংসারে চার বোন, বাবা ও মা। লক্ষ্মী মেজো। নাবালিকা অবস্থায় দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। আর দুই বোন নবম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। তারও বিয়ে দিবে বলে দেখাশোনা চলছিল। কিন্তু সে পড়াশোনা করতে চাই।

Advertisement

ফলে বিয়ে করবে না বলে পরিবারে জানিয়ে দেয়। কিন্তু অভাবের সংসারে পড়াশোনার খরচ যোগাবে কে? তখন থেকেই নিজের খরচের দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নেয় লক্ষ্মী। ঝুমুর, কীর্তণ দলে নৃত্য করতে যায়। তা থেকে মেলে পাঁচশো টাকা। বাড়িতে কয়েকজনকে টিউশন পড়ানোর পাশাপাশি বাবা-মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে যায় শাল পাতা তুলতেও। তা থেকে যা আয় হয় নিজের পড়ার খরচ চালিয়ে নেয়। কিন্তু যে পরিমাণ টাকা এতদিন উপার্জন করত তাতে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনার খরচ মোটামুটি চললেও কলেজে ভর্তি হলে তার খরচ তো অনেকটাই।

আরও পড়ুন : উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি ভাষায় রাজ্যে যুগ্ম প্রথম ঝাড়গ্রামের দুই আদিবাসী কন্যা

Advertisement

তা নিয়ে চিন্তাই লক্ষ্মী ও তার পরিবার। পরিবারে বিঘা খানেক জমি থাকলেও শুধুমাত্র ধান চাষ হয় বর্ষার সময়ে। তাও আবার হাতিতে নষ্ট করে দেয়। সরকারী ভাবে বাড়ি না পেলেও মাটির দেওয়াল অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া বাড়িতে লক্ষ্মীর স্বপ্ন উচ্চ শিক্ষা লাভের। জয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মন্ডল বলেন, “গর্ব হয় ওকে নিয়ে। ওর জেদ প্রচুর। শুধু পড়াশোনা নয় খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয় লক্ষ্মী। আরও ভালো ফলাফল করত, কিন্তু পরিবারে আর্থিক অনটন এবং করোনা পরিস্থিতির ফলে অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছে।

ওদের জন্য আমরা স্কুল বন্ধের সময়ও ক্লাস করতে গিয়েছি। আজ তা সার্থক হয়েছে।” একদা জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে শিরোনামে ছিল রঞ্জার জঙ্গল। সেই জঙ্গল ঘেরা গ্রামের মেয়ের অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তি আজ অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। লক্ষ্মী বলে, “পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারব বলে একসময় ভাবতেই পারিনি। করোনা পরিস্থিতিতে খাবার জুটতো না ঠিক মতো। ফোন ছিল না। পরে ফোন পেলেও রিচার্জের টাকা নেয়। বিদ্যালয় ও কোচিংয়ের শিক্ষকরা যদি আমাকে পড়়াশোনার জন্য সাহায্য না করতেন তাহলে আমি অন্ধকারে ভেসে যেতাম।”

Advertisement

আরও পড়ুন : উচ্চ মাধ্যমিকে অষ্টম মেদিনীপুর শহরের সৈয়দ শাকলাইন কবির, প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৯

আরও পড়ুন : মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও জেলার জয়জয়কার, পাশের হারে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর ! জেলার মুকুটে তৃতীয় , পঞ্চম , যষ্ঠ ও দশম স্থান

সে বলে, “পড়াশোনার খরচ চালাতে ঝুমুর ও কীর্তণ দলে নৃত্য করি। বাড়িতে টিউশন পড়ানো ও বাবা-মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে যায় শালপাতা তুলতেও।” বিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক রাজকুমার দাস বলেন, “সবদিনই লক্ষ্মী লাজুক স্বভাবের। প্রয়োজন হলেও কোনোদিন কিছু চাইত না। ঝুমুর-কীর্তণ দলে নৃত্য করে সে পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতো। তা জানার পর থেকে বিদ্যালয়ে ভর্তি ফি মুকুব করার পাশাপাশি বই খাতা স্কুল থেকে দিতেন প্রধান শিক্ষক।”

Advertisement

লক্ষ্মীর বাবা শ্যামল মাহাত বলেন, “ভালো রেজাল্ট করায় আমরা খুশি। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের বাজারে দিনমজুর পরিবারে সংসার চালাতে পারছি না ঠিকমতো ভাবে। তারউপর মেয়েদের পড়াশোনা চালাব কিভাবে খুঁজে পাচ্ছি না।” অভাবের পরিবারে জন্ম নেওয়া অনেক মেধাবী হারিয়ে গিয়েছে। পড়াশোনা ছেড়ে কাঁধে তুলে নিতে হয়েছে সংসারের দায়িত্ব। এখন লক্ষ্মীর ইচ্ছা উচ্চশিক্ষা লাভ। কিন্তু দুঃখ-কষ্ট অভাব-অনটনে যাদের জীবন তাদের ইচ্ছার মূল্য কে দিবে?

আরও পড়ুন : বাবা-মা হোটেল চালান! অভাবের সঙ্গে লড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে তৃতীয় তমলুকের চন্দ্রবিন্দু

আরও পড়ুন : উচ্চ মাধ্যমিকে র‍াজ্যে নবম পশ্চিম মেদিনীপুরের তুহিন, প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮

লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi

HS Result 2023

– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspape

You may also like

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.