ওয়েব ডেস্ক, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনালাইন : পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ১৩ টি ব্লক এলাকার স্থায়ী বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রকল্প ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য ২০২৩-২৪ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটেও কোনও টাকা বরাদ্দ হলো না। বুধবার কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে চোখ রেখেছিলেন ঘাটালবাসীর পাশাপাশি রাজনৈতিক মহল। কিন্তু গতকালের কে্ন্দ্রীয় বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় ঘাটালবাসী যেমন হতাশ তেমনই কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপিকে তোপদাগতে ছাড়েনি তৃণমূল-সিপিএম।
আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ
ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন : Click Here
বাজেটে অর্থবরাদ্দ না হওয়া নিয়ে ঘাটালের তৃণমূলের নেতা তথা ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি দিলীপ মাজি এক বিবৃতিতে বলেন, কিছুদিন আগে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সহ ঘাটালের বিধায়ক মাস্টার প্ল্যানের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে বলে অপ্রচার করেছিল, পরে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছে অর্থ বরাদ্দ হয়নি। ঘাটালের মানুষকে তাঁরা ভুল বার্তা দিয়েছিল। বাজেটে কেন অর্থ বরাদ্দ হলনা এর জবাব বিজেপির নেতারা দিক।
ঘাটালের সিপিএম নেতা সমীর হাজরা, জানান এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে আশাকরেছিলাম মাস্টার প্ল্যানের অর্থ বরাদ্দ হবে, কিন্তু তা না হওয়ায় আমরা হতাস। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি’র যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক ও দেবাশীষ মাইতি বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করলাম এবারের বাজেটেও কেন্দ্র সরকার মাস্টার প্ল্যানের জন্য কোন অর্থ বরাদ্দ করলো না, অথচ কয়েক মাস আগে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের “ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স কমিটি”র ছাড়পত্র পাওয়ার পর ঘাটালে কেন্দ্রীয় শাসক দলের রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় অর্থ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী পর্যন্ত শোরগোল ফেলে দিয়ে বললেন, মাস্টার প্ল্যানের অর্থমঞ্জুর হয়ে গেছে, কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা মাত্র।
আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের এই ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি অতি দ্রুত অর্থ মঞ্জুর করারও দাবি তুলেছেন নারায়নবাবু। যদিও এ বিষয়ে বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তন্ময় দাস এবং বিধায়ক শীতল কপাটের মুখে কুলুপ। একাধিকবার ফোন করেও তাঁদের কোনও মন্তব্য মেলেনি। প্রসঙ্গত, ঘাটালবাসীর মতে বিগত চল্লিশ বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে মঞ্চ কাঁপানো বক্তব্যে ঝড় তুলেছে রাজনৈতিক দলগুলি। কিন্তু কবে তা রূপায়ন হবে বা আদৌ আর হবে কিনা তা সকলেরই অজানা।
মাস্টার প্ল্যানকে হাতিয়ার করে রাজনৈতিক দলগুলি একের পর এক নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও এখনও অথৈই জলেই থেকেছে ঘাটাল মহকুমার মানুষ। ঘাটালবাসীর প্রশ্ন, মাস্টার প্ল্যান রাজনৈতিক দলগুলির কাছে শুধুই কী নির্বাচনী অস্ত্র? চল্লিশ বছর ধরে দফায় দফায় কেন্দ্র-রাজ্য ফাইল চালাচালির পরেও অর্থ বরাদ্ব না হওয়ায় আজও সরকারের ঠান্ডা ঘরেই আটকে রয়েছে মাস্টার প্ল্যান। কয়েক মাস আগে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের “ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স কমিটি”র ছাড়পত্র পাওয়ার পর আশার আলো দেখছিলেন ঘাটালবাসী।
আরও পড়ুন : ঘাটালের সমস্ত ICDS সেন্টারে ঝটিকা পরিদর্শন প্রাশাসনিক কর্তাদের
সেই ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে বলে ঘাটালে এসে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির রাজ্য সভাপতি থেকে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্বরা প্রচার করেন মাস্টার প্ল্যানের অর্থ বরাদ্দ হয়ে গেছে। সেই প্রচারের পরে ঘাটালের সাংসদ দেব লোকসভায় লিখিত আবেদন করে জানতে চান ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে কিনা। সাংসদের আবেদনের উত্তরে কেন্দ্রের অর্থমন্ত্রক জানিয়ে দেয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ছাড়পত্র পেয়েছে কিন্তু অর্থ বরাদ্দ হয়নি। তারপর থেকে বিজেপির অপ্রচারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করে তৃণমূল সিপিএম। গতকালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কোনও প্রসঙ্গ না ওঠায় ফের চাগাড় দিয়ে উঠেছে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান প্রসঙ্গ।
প্রসঙ্গত, ১৯৮২ সালে তৎকালীন সেচমন্ত্রী ঘাটাল মাস্টারা প্ল্যানের শিলান্যাস করেন। শিলান্যাস হলেও কোনও অজানা কারণে দীর্ঘকাল ধরে রূপায়ণ কাজ শুরু হয়নি। ২০০১ সালে মাস্টার প্ল্যান রুপায়ণের দাবিতে ঘাটালে শুরু হয় আন্দোলন, তৈরি হয় এক অরাজনৈতিক সংগ্রাম কমিটি। ২০০৬ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘাটাল পরিদর্শনে আসেন, কাজের জন্য ৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি হয় এবং প্রথম দফায় ৩৫০কোটি টাকা দিয়ে কাজ শুরু করার কর্মসূচী নেওয়া হয়, পরে নানান টালবাহানার কারনে ফের ঠান্ডা ঘরে চলে যায় মাস্টার প্ল্যানের কাজ।
আরও পড়ুন : পশ্চিম মেদিনীপুরে মিড ডে মিলের খিচুড়িতে আরশোলা ! তীব্র শোরগোল
আরও পড়ুন : গতি নিয়ন্ত্রণে স্পিড মিটার দিয়ে ঘাটালের রাস্তায় পুলিশের চেকিং
২০০৯ সালে ফের প্রকল্প খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করে রাজ্য সরকার, নতুনভাবে প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ১৭৮০কোটি টাকা। ২০১০ সালে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রনের অধীনে এই প্রকল্পের নতুন ডিপিআর জমা পড়ে কেন্দ্রে। ২০১১ সালে কেন্দ্রীয় কমিটি আরও কিছু তথ্য জানতে চেয়ে ডিপিআর রাজ্য সরকারের কাছে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। ফের নতুন ডিপিআর তৈরির পর সংশোধিত ডিপিআর পুনরায় জমা পড়ে কেন্দ্রের কাছে। পদ্ধতিগত ভুল থাকায় আবার ফেরত আসে ডিপিআর। ২০১৩ সালে খড়গপুর আইআইটির বিশেষজ্ঞদের দিয়ে নতুন ডিপিআর তৈরি করা হয়। সেই ডিপিআর মোতাবেক কয়েক মাস আগে মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের “ইনভেস্টমেন্ট ক্লিয়ারেন্স কমিটি”র ছাড়পত্র দিলেও অর্থ বরাদ্দ করেনি কেন্দ্র। প্রকল্প মোতাবেক মোট খরচের কেন্দ্র দেবে ৫০ শতাংশ এবং রাজ্য দেবে ৫০ শতাংশ।
তবে মাস্টার প্ল্যান নিবে রাজনৈতিক জলঘোলা যাই হোক, তাতে করে বন্যার সময় জলবন্দীদশা, নৌকা, ডিঙি, ছাদে বসবাস করা, অন্যের বাড়িতে রাত কাটানোর চেনা ছবির কবে ঘটবে নাকি বিগত কয়েক দশকের মত অথৈই জলেই থেকে যাবে এই প্রকল্প তা নিয়ে সন্ধিহানে ঘাটালবাসী।
অর্থ বরাদ্দ হলে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানে কী কী কাজ হওয়ার কথা ?
*কংশাবতী ও শিলাবতী বির্স্তীর্ন নদীপথ সংস্কার।
*কেঠে ও কাটান খাল সংস্কার করে দুই পাড়ে স্থায়ী বাঁধ তৈরি করা ।
*ঘাটালের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী ও খালগুলির সংযোগস্থলের বিভিন্ন জায়গায় যন্ত্রচালিত লক গেট বাসানো।
*কাঁসাই-পলাশপাই-দুর্বাচটি সহ বিভিন্ন নদী ও খাল সংস্কার।
*ঘাটাল মহকুমাজুড়ে বিভিন্ন নদীবাঁধ মেরামত করা।
*জল নিকাশের জন্য চন্দ্রকোনা- ঘাটাল- দাসপুরের বহু জায়গায় পাম্প হাউস তৈরি।
*প্রভৃতি।
আরও পড়ুন : খড়ারে পানীয় জল থেকে আন্ত্রিক নয় জানাল স্বাস্থ্য দপ্তর! এলাকা ঘুরে দেখলেন মহকুমাশাসক
আরও পড়ুন : শালবনীতে সরস্বতী প্রতিমার বিসর্জনে ডিজের দাপট, গ্রেফতার ৬, বাজেয়াপ্ত ডিজে বক্স সহ মেশিন
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Ghatal Master Plan
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper