পত্রিকা প্রতিনিধি: রেলশহর খড়গপুরে আবারও এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু ঘটল। এই নিয়ে খড়গপুর করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৪। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর গত ১২ জুন খড়গপুরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালনগরের বাসিন্দা রেলের এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী হূদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তির দিনই ৭০ বছর বয়সের ওই বৃদ্ধের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয় কোভিড পরীক্ষার জন্য ।কিন্তু তারপরের দিনই অর্থাৎ ১৩ জুন তার করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসার আগে ওই বৃদ্ধের শরীরে নানা রকম উপসর্গ দেখা যায় বলে জানা গিয়েছিল হাসপাতাল সূত্রে । পরে রোগীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে ১৮ জুন তার পুনরায় করোনা পরীক্ষার জন্য লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হয় । ১৯ জুন ওই বৃদ্ধের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। পরদিন (২০ জুন) ভোর রাতেই ওই বৃদ্ধ মারা যান।
যদিও খড়গপুর শহরে প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২৯ মে মেদিনীপুর শহর সংলগ্ন গ্লোকাল হাসপাতলে ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৪৫ বছরের ওই ব্যক্তি ছিলেন গোলবাজারের ট্রাঙ্ক ব্যবসায়ী । দ্বিতীয় মৃত্যু হয় রেল শহরের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝুলির বাসিন্দা এক অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীর (৬২)।তৃতীয় মৃত্যু হয় ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ৫৮ বছরের এক রেলকর্মীর। এই রেলকর্মীর ও মৃত্যুর পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে ।খড়গপুরে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে চলায় আশঙ্কায় স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা । রবিবার খড়্গপুর মহকুমাশাসক বৈভব চৌধুরীর উদ্যোগে শহরের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচবেড়িয়া এলাকায় মোট ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা যায় খড়গপুর শহরে আক্রান্ত হয়ে যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে দুজনই ওই এলাকার । আবার ওই দুজনের পরিবার থেকেও করোণা আক্রান্ত ধরা পড়ে ।এইজন্যই পুলিশ প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দপ্তরের তৎপরতায় ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয় ।
অপরদিকে কিছুদিন আগেই খড়্গপুরের এক এক মেটালিক্সের ম্যানেজারের ভাই কোভিড আক্রান্ত হয়ে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন । ভাইয়ের দেখা শোনার জন্যই কারখানা থেকে ছুটি নিয়ে গিয়েছিলেন ওই ম্যানেজার কিন্তু তার ভাই মারা যান ।এই অবস্থাতেই বাড়িতে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই ম্যানেজার ,করোনা পরীক্ষার জন্য তার লালারসের নমুনা সংগ্রহ করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আছে এবং তাকে কলকাতায় মেডিকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । পুলিশের তৎপরতায় বিদ্যাসাগরপুর এলাকা কনটেইনমেন্ট জন ঘোষণা করা হয় । ম্যানেজার যেহেতু বাড়িতেই অসুস্থ হয়েছিলেন নিয়মমতো স্ত্রী ও পুত্রের করোনা পরীক্ষার জন্য আসতে বলা হয় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ,কিন্তু তা উপেক্ষা করেই কলকাতায় চলে যান মা ও ছেলে । কলকাতার মেডিকা হাসপাতাল এই তাদের লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় করোনা পরীক্ষার জন্য । রবিবার রাতেই কাদের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ আসে ।বর্তমানে ওই ম্যানেজারের সঙ্গে কলকাতার মেডিকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্ত্রী ও ছেলে ।
সোমবার স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে মেদিনীপুর সদর ব্লকের করো না আক্রান্ত হয়েছেন ৪ পরিযায়ী শ্রমিক । আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজন পাথরার মালিদার বাসিন্দা। একজন পাচখুরির ছেড়ুয়ার বাসিন্দা। তবে চারজনই ‘অ্যাসিমটোমেটিক’ অর্থাৎ উপসর্গহীন । মঙ্গলবার সকালেই তাদের মেদিনীপুর করোনা লেভেল ১ হাসপাতালে পাঠানো হয় ।অপরদিকে গোয়ালতোড় এর একজন পরিশ্রমী আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে । এই ব্যক্তিও সম্প্রতি মহারাষ্ট্র থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন । সোমবার দিন সকালে ওই পরিযায়ী শ্রমিকের করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে ।
অপরদিকে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার নবনির্মিত করোনা লেভেল ৪ হাসপাতাল শালবনী সুপার স্পেশালিটি থেকে, মঙ্গলবার ৪ জন করোনা মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন। উল্লেখ্য যে, মাত্র ৬ দিন হল এই হাসপাতালের পথচলা শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই সোমবার ৭ জন এবং আজ, মঙ্গলবার ৪ জন আক্রান্ত’কে সুস্থ করে বাড়ি পাঠালেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে, করোনা মুক্ত ব্যক্তিরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে গেলেন।