ওয়েব ডেস্ক, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : ২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন বহু যাত্রী। যাদের মধ্যে বেশিরভাগকে শনাক্ত করে পরিবারকে দেওয়া হলেও ২১ জনকে এখনও শনাক্ত সম্ভব হয় নি। যাদের তালগোল পাকানো দেহাবশেষ একত্রে উদ্ধার হয়েছিল। নিখোঁজ হিসেবেই তাঁরা আজও ফাইলে। তাদের পরিবার পায়নি সরকারি সুবিধা। আদালত রেলওয়ের চক্করে আজও লালফিতার ফাঁসে বাঁধা অবস্থায় লড়াই করছে। এমনই একটি পরিবার হল হাওড়ার সালকিয়ার আটা পরিবারে।
বছর বিয়াল্লিশের প্রসেনজিত আটা ওই জ্ঞানেশ্বরীতেই দুর্ঘটনার পরে নিখোঁজ। ঘটনার পরে মৃত ধরে রেলওয়ে ৫ লাখ, রাজ্য সরকার ৩ লাখ ক্ষতিপূরণ দিলেও আজও মৃত বলে স্বীকৃতি পায় নি প্রসেনজিত আটা। পরিবার নানা কাজের স্বার্থে মৃত সার্টিফিকেট পেতে আদালতে মামলা চালাচ্ছে। ১২ বছর ধরে মামলা লড়ে গত ৩ এপ্রিলে হৃদরোগে প্রাণ হারিয়েছেন স্ত্রী যুথিকা আটা। আদালতে লড়াইয়ে এবার বৃদ্ধা অসহায় ঠাকুমাকে নিয়ে হাজির হলেন নাবালিকা মেয়ে পৌলমি আটা।
প্রসেনজিত আটা’র হয়ে মামলা পরিচালনা করছেন আইনজীবি তীর্থঙ্কর ভকত। তীর্থঙ্কর বাবু বলেন, “প্রসেনজিত রেলওয়েরই ঠিকাদার ছিলেন। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সরবারহের কাজ করতেন। তিনি মহারাষ্ট্রের ভাদুয়ালে যাচ্ছিলেন ওই জ্ঞানেশ্বরীতে চেপেই ৷ কিন্তু ২৭ মে রাত সেই দুর্ঘটনার পরে তিনি নিখোঁজ হয়ে যান। তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন ৭২ ঘন্টার মধ্যে সমস্ত ছিন্নভিন্ন দেহ শনাক্ত করে পরিবারের হাতে দেওয়া হবে। দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ।
কিন্তু ১২ বছর কেটে গিয়েছে পরিবারটিকে এখনও দেওয়া হল না মৃত সার্টিফিকেট। অথচ মৃত বলে রেলওয়ে ৫ লাখ, রাজ্য ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। অথচ মৃত সার্টিফিকেট দিচ্ছে না ৷ নিখোঁজ ২১ জনের তালিকাতে রাখা হয়েছে ১২ বছর ধরে। অথচ আইনে বলা রয়েছে ৭ বছর নিখোঁজ থাকলে মৃত বলে ঘোষণা করতে হবে। এই প্রাশাসনিক উদাসীনতার কারণে ১২ বছর ধরে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে হয়রান হয়ে তাঁর স্ত্রী হৃদরোগে প্রাণ হারালেন।
রোজগারহীন পরিবারে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে প্রসেনজিতের বৃদ্ধা মা ও একমাত্র নাবালিকা মেয়েকে। এতদিনে আদালত নিয়মানুসারে নোটিস করেছে প্রশাসনের কর্তাদের। মঙ্গলবার পৌলমি তাঁর বৃদ্ধা ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে মেদিনীপুর আদালতে হাজির হয়েছিলেন। পৌলমি বলেন, “আমার বাবা যে মারা গিয়েছে তা প্রমাণ করতে করতে মা শেষ পর্যন্ত শয্যাশায়ী হয়ে প্রাণ হারালেন। এখন বাড়িতে আমি ও ঠাকুমা, কোনো রোজগার নেই ৷ বারো বছর কি কষ্টে কাটছে তা কেবল আমরাই জানি।
মা যে লড়াই করছিলেন তা আদালতের কাছে আমি করতে পারবো না। আমি নাবালিকা হওয়াতে ঠাকুমাকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি তাই ৷ বাবার মৃত্যুর শংসাপত্র পেলে হয়তো চাকরির জন্য চেষ্টা করতে পারবো।”এই মামলা বর্তমানে ঝাড়গ্রাম আদালতে। মেদিনীপুর আদালত থেকে সরানো হয়েছে। তাই নিয়মানুসারে মেদিনীপুর আদালতে মামলাকারী মৃতা মা এর যাবতীয় তথ্য দিয়ে এই মামলা লড়ার প্রস্তুতি শুরু করলেন নাবালিকা পৌলমি।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Jnaneswari Train Accident
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper In Midnapore