Home » Student story : স্বাক্ষর করতে জানে না বাবা-মা, বিড়ি বেঁধে চলে সংসার, কলা বিভাগে চমকে দেওয়া রেজাল্ট করেও উচ্চশিক্ষার দরজা বন্ধের আশঙ্কা সৌমেনের

Student story : স্বাক্ষর করতে জানে না বাবা-মা, বিড়ি বেঁধে চলে সংসার, কলা বিভাগে চমকে দেওয়া রেজাল্ট করেও উচ্চশিক্ষার দরজা বন্ধের আশঙ্কা সৌমেনের

by Biplabi Sabyasachi
0 comments

বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন: বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তবুও মনে অদম্য ইচ্ছাশক্তি। শিক্ষার আলো থেকে অনেক দূরে বাবা-মা। সেই ঘরে সুশিক্ষার আলো জ্বালাতে বদ্ধপরিকর সৌমেন। তবে কতদিন সেই আলো জ্বলবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে পরিবারে। উচ্চশিক্ষার দরজা বন্ধের আশঙ্কা করছে সৌমেন।

বুধবার উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হয়েছে। সেই ফলাফলে নজরকাড়া সাফল্য পশ্চিম মেদিনীপুরের গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌমেন দোলই-এর। কলা বিভাগে ৪৫২ নম্বর পেয়ে বিদ্যালয়ে প্রথম স্থানাধিকারী সে। চমকে দিয়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও। তাঁদের ধারণা ছিল না ছাত্রটি এই রেজাল্ট করবে। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুভাষ হাজরা বলেন, “স্কুলে আগে কোনোদিন ভালো রেজাল্ট করেনি। পড়াশোনা বাদে সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও ‘উজ্জ্বল’ মুখ নয়। তার রেজাল্ট আমাদেরকে চমকে দিয়েছে।” বাংলায় ৮৮, ইংরেজিতে ৮৩, দর্শনে ৯৫, ভূগোলে ৯৪, সংস্কৃতে ৯২ নম্বর পেয়েছে সৌমেন।

আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ

ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন :

For WhatsApp Group : Click Here

মেদিনীপুর সদর ব্লকের মনিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের এনায়েতপুরে বাড়ি। মাটি আর কিছুটা ইটের দেওয়ালে অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া তার বাড়ি। বাবা স্বপন দোলই, মা শঙ্করী দোলই দুজনেই বিড়ি শ্রমিক। মা আবার জঙ্গলে গিয়ে শুকনো কাঠ, শাল পাতা তুলে এনে বিক্রি করেন। এভাবেই চলে তাদের সংসার। রেশন থেকে যা চাল পান তা দিয়ে সারা মাস চলে না। অন্যের বাড়িতে রেশনের চাল কম দামে কিনতে হয়। বর্ষার সময় বাড়ির চাল ছুঁইয়ে জল ভেতরে প্রবেশ করে। কষ্টের মধ্যেই দিনযাপন করে উচ্চমাধ্যমিকে নজরকাড়া সাফল্য সৌমেনের। সৌমেন জানিয়েছে, পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বিষয় ভিত্তিক গৃহ শিক্ষক ছিল না। ক্লাসে ফার্স্ট বয়ও ছিলাম না। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও স্থানীয় একটি কোচিং সেন্টারে পড়াশোনা করে এই রেজাল্ট। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা যখন পড়াতেন তখন মনোযোগ সহকারে শুনতো সে। বাড়ি এসে সেগুলো আবার পুনরায় পড়তো। প্রতিমাসে কোচিং সেন্টারের বেতনও দিতে পারত না তার বাবা। এমনকি বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় পরীক্ষার আগে লাইন কেটে দিতে এসেছিল। পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে বিল মিটিয়ে আসে।

আরও পড়ুন : ইতিহাস স্মরণ করাতে চার বিপ্লবীর নামে মেদিনীপুরের রাস্তার নামকরণ

ভালো রেজাল্ট করেও দারিদ্র্যতার কারণে উচ্চশিক্ষার দরজা বন্ধ হয়ে যাবে বলেই মনে করছে সৌমেন ও তার পরিবার। সৌমেনের বাবা স্বপন দোলই বলেন, “বিড়ি বেঁধে, জঙ্গলের পাতা, কাঠ বিক্রি করে সংসার চলে। ছেলেকে পড়াশোনা করাবো কিভাবে? নিজেরা ঠিক মতো খেতে পায় না। পড়াশোনার অনেক খরচ। জানি না আর পড়াতে পারব কিনা।” ভালো রেজাল্ট করার অদম্য জেদ ধরেছিল সৌমেনকে। বাবা-মা স্বাক্ষর পর্যন্ত করতে জানে না। তবুও সৌমেন যখন রাত জেগে পড়াশোনা করত, তখন বাবা-মা পাশে বসে জেগে থাকতেন বিড়ির কুলো নিয়ে। মা শঙ্করী দোলই বলেন, আমরা পড়াশোনা জানি না, স্বাক্ষরও করতে পারি না। ছেলে কেমন পড়াশোনা করে তা পাড়ার অন্যান্যদের কাছে জেনে আসতাম। ছেলে রাত জেগে পড়তো বলে আমরাও জেগে থাকতাম।” উচ্চশিক্ষা নিয়ে সৌমেন জানিয়েছে, “টেকনিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করব। আমার পরিবারে খুবই অভাব।

আরও পড়ুন : দিনমজুরের মেয়ে! উচ্চ মাধ্যমিকে সাঁওতালি ভাষায় রাজ্যে প্রথম ঝাড়গ্রামের মিনতি

বাবার বয়স হচ্ছে। পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারবে না। আমাকে উপার্জনের পথ বেছে নিতে হবে। তাই টেকনিক্যাল বিষয় আমার পছন্দ।” জঙ্গলমহলের এমন অনেক সৌমেনের উচ্চ শিক্ষার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে দারিদ্র্যতা। প্রশাসনকে পাশে দাঁড়ানোর আবেদন করছেন গ্রামবাসীরা।

লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi

Student story

Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper

You may also like

Leave a Comment

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.