Home » রেকর্ড সংক্রমণ শহরে, একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৭

রেকর্ড সংক্রমণ শহরে, একদিনে করোনায় আক্রান্ত ১৭

by Biplabi Sabyasachi
0 comments

পত্রিকা প্রতিনিধি: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আজ একেবারেই নিয়ন্ত্রণে। গতকাল ৭৭ জনের (রাজ্যের বুলেটিনে ৯৯) পর, জেলা স্বাস্থ্য ভবনের মঙ্গলবারের রিপোর্ট অনুযায়ী, জেলায় আজ করোনা আক্রান্ত মাত্র ২৭ জন। ঘাটাল মহকুমা ও খড়্গপুর মহকুমা, এতদিন করোনা সংক্রমণে দাপিয়ে বেড়ানো, এই দুই মহকুমা জুড়ে আক্রান্ত মাত্র ১০ জন। সেটাও আবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নয়, ঘাটালের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র দাসপুর – ১ এ ৫ জন এবং খড়্গপুর শহরেই (পৌরসভার অধীনে) ৫ জন। এরমধ্যে, ডায়মন্ড টাওয়ার এলাকায় ২ জন, সারদাপল্লী ১ জন, ছোটোট্যাংরা ১ জন এবং বারবেটিয়া’তে ১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। অপরদিকে, শুধুমাত্র মেদিনীপুর শহরেই আজ করোনা সংক্রমিত ১৭ জন! এর আগে একদিন শহরে সর্বাধিক ৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার মধ্যে ২ জন আবার ছিলেন মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র চিকিৎসক, যেখানে সংক্রমণ হওয়াটা স্বাভাবিক, কারণ সংক্রমিত অনেক রোগীই সেখানে পৌঁছে যান, রিপোর্ট আসার আগে প্রাথমিক চিকিৎসাও করতে হয়। কিন্তু, এবার সাধারণ শহরবাসীই ১৭ জন। আগামীকালও কম-বেশি একই সংখ্যক করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে; কারণ জেলা স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা যায়, ৩০-৩২ জনের রিপোর্ট অমীমাংসিত এসেছে, যাঁরা মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। পরিস্থিতি দেখেশুনে জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিকের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য, অন্যরা কমছে, মেদিনীপুর বাড়ছে!

এবার শহরের ১৭ জন করোনা আক্রান্ত সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র মারফত যে তথ্যগুলি পাওয়া গেছে, সেই অনুযায়ী, শহরের ভোলাময়রার চকে মঙ্গলবার নতুন করে চারজন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। গত ৭ আগস্ট করোনা আক্রান্ত মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের স্ত্রী (৪৮), কন্যা (২২) ও দুই ভাইপো (২০ ও ২৩) সংক্রমিত হয়েছেন। নেতাজীনগরের বাসিন্দা, শহরের নামকরা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকের রিপোর্ট এদিন পজেটিভ এসেছে। তিনি অবশ্য গত এক সপ্তাহ ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। আয়ুশে গিয়ে লালারস দিয়ে এসেছিলেন গত ৯ আগস্ট। মঙ্গলবার রাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর, হাতারমাঠের যে যুবক (৩০) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তিনিও গত ৫ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন, মুখে স্বাদ ছিল না। তাই, টেস্ট করিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি একটি গ্যাস এজেন্সির সাথে যুক্ত হলেও, গত ৫ দিন ছুটিতে ছিলেন বলে জানা গেছে। এরপর, শহরের মহতাবপুর থেকে নতুন করে ৩ জন উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই গত ৫ আগস্ট করোনা সংক্রমিত নিজেদের বন্ধু তথা কোতোয়ালি থানার সিভিক পুলিশের সংস্পর্শে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। তবে, প্রত্যেকেই উপসর্গহীন এবং বয়স ২৬ থেকে ৩০ এর মধ্যে। পাটনাবাজারের এক দম্পতি (৬০ ও ৫০) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের শরীরেও বিশেষ উপসর্গ নেই। পাটনা বাজার এলাকায় সংক্রমনের দাপাদাপি দেখে শহরের আয়ুশ হাসপাতালে গিয়ে লালারস দিয়ে এসেছিলেন। মঙ্গলবার রাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এরপর, শহরের সিপাই বাজারের নাইটগার্ড (৩০) করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। তিনি স্বল্প উপসর্গযুক্ত। শেখপুরার বাসিন্দা (৪২), পেশায় যিনি গড়বেতা-৩ নং এর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাড়ির চালক, তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, তবে তিনি সম্পূর্ণ উপসর্গহীন বলেই জানা গেছে। করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, জেলা তথা শহরের অন্যতম এক করোনা যোদ্ধা। তিনি মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের করোনা টেস্টিং ল্যাবরেটরি (ভিআরডিএল)’র এক নিষ্ঠাবান কর্মী। এতদিন অন্যের করোনা পরীক্ষা করে এসেছেন, আজ তিনি নিজের পরীক্ষা করলেন এবং দেখলেন রিপোর্ট পজিটিভ! তবে তিনি উপসর্গহীন এবং সম্পূর্ণভাবে চিন্তামুক্ত বলে জানা গেছে মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে। সুস্থ হয়ে তিনি ফের নিজের কর্তব্য পালনে উদগ্রীব বলেও জানা গেছে। ৩৪ বছরের এই যুবক শহরের নতুনবাজারের বাসিন্দা। সর্বশেষ, তিনজন করোনা আক্রান্ত হলেন, মেদিনীপুর পুলিশ লাইনের পুলিশ কর্মী। প্রত্যেকেই জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন। দু’জন পুলিশ কর্মী পুরুলিয়ার বাসিন্দা (৪৭ ও ৪২) এবং অপর মহিলা পুলিশ কর্মী (২৮) গোপগড় এলাকার বাসিন্দা। তিনজনেরই দিনকয়েকের মধ্যে জ্বর হয়েছিল এবং তাঁরা মুখের স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তাই, গত ৯ আগস্ট তাঁরা নিজেদের লালারসের নমুনা দিয়েছিলেন আয়ুশে গিয়ে, ১১ আগস্ট রাতে রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

এই মুহূর্তে, ঘাটাল-দাসপুর-দাঁতন যেখানে অনেক নিয়ন্ত্রণে, সেখানে
মেদিনীপুর শহরে হঠাৎ করে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ কি শুধুই জেলা সদর বলে? না কি শহরবাসীর অসচেতনতা বা আত্মতুষ্টিও কাজ করেছে? তা নিয়ে বিতর্ক বা বিশ্লেষণে যেতে চাইছেন না কেউই, কিন্তু, প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে গিয়ে, যে দু’একটি অভিজ্ঞতার কথা তুলে না ধরলেই নয়, সেগুলি হল- সঠিকভাবে মাস্ক পরা বা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনীহা এবং অজ্ঞতা। বেশিরভাগ মানুষ মনে করছেন, “সংক্রমণ সবারই হচ্ছে, আমার হলেও হবে” অথবা “ও আমাদের ওসব করোনা-ফরোনা হবেনা!” এক্ষেত্রে, করোনা’কে ডেকে এনে তাঁরা বিপদে ফেলছেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যযোদ্ধা কিংবা করোনা যোদ্ধাদের এবং ৩-৫ শতাংশ সেই সব মানুষদের, যাঁদের শরীরে কো-মর্বিডিটি আছে অথবা যাঁদের বয়স ৫০-৬০ পেরিয়ে গেছে। আর এই বিষয়ে একটা ছোট্ট উদাহরণও তুলে ধরা আজ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে। শহরের ভোলাময়রার চকের কাছে একটি কনটেইনমেন্ট জোনের ছবি তুলতে গিয়ে, মঙ্গলবার (১১ আগস্ট), ওই কনটেইনমেন্ট জোন লাগোয়া বড় রাস্তা দিয়ে যে ৮-১০ কে ওইটুকু সময়ের মধ্যে (সন্ধ্যা নাগাদ) হেঁটে, সাইকেল অথবা বাইকে যেতে দেখা গেল, তাঁদের ২-৩ জনের মাস্ক নেই, ২-৩ জন ঠিক কনটেইনমেন্টের কাছটিতে এসে মাস্ক অথবা রুমালটি নাকের কাছে তুলে নিলেন (এমন ভাব যেন, করোনা ওইখানটিতেই বসে আছে), আর ২-৩ জন অবশ্য ঠিকঠাক ভাবে মাস্ক পরিধান করে ওই রাস্তা দিয়ে চলে গেলেন। মনে পড়ে গেল, করোনা মুক্ত হয়ে ফিরে আসার পর, অবিভক্ত মেদিনীপুরের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও সুপরিচিত একজন শিক্ষক তথা শিক্ষাবিদের ফেসবুক লাইভে শোনা একটি কথা, উনি বলেছিলেন, “সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর, জানালা দিয়ে ইদানীং লক্ষ করছি, আমার বাড়ির কাছে এসেই লোকেরা নিজেদের কাপড়, গামছা অথবা মাস্কটি মুখে জড়িয়ে নিচ্ছেন!”
যাইহোক, সমস্ত আশঙ্কার মধ্যেও আশার কথা হল, আক্রান্তদের মধ্যে ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন করোনা আক্রান্ত! আর, শহরের নতুন ‘সেফ হোম’ ও উদ্বোধনের অপেক্ষায়! তাই, ভয়ের বিশেষ কারণ নেই। তবে, সাবধানতা অবলম্বন জরুরি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে, ৩-৫ আক্রান্তের শরীরে বিভিন্ন ধরনের কো-মর্বিডিটি দেখা যায়, যা হঠাৎ করে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়। সর্বোপরি, সংক্রমনের হার কমানোর জন্য বা সংক্রমণ রোধ করার জন্য সচেতনতা বা সাবধানতার যে কোনো বিকল্প নেই তা বলাই বাহুল্য!

You may also like

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.