ওয়েব ডেস্ক, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : কোন অচিন জঙ্গল থেকে চলে এসেছিল সে। একদিন ধরাও দিয়েছিল ক্যামেরায়। তারপর থেকে সে নিপাত্তা৷ আকাশে উড়ল ড্রোন, ছাগলের টোপ দিয়ে পাতা হল ফাঁদ৷ কিন্তু কোথায় দক্ষিণরায়? শুধু পায়ের ছাপ আর দু-একটা গরু-বাছুরের অন্তর্ধান৷ ব্যস, এ ছাড়া কোনও প্রমাণই নেই৷ একসময় সন্দেহ দানা বাঁধে বাঘ আদৌ আছে তো! ১৩ এপ্রিল, ২০১৮ শুক্রবার সকালে সেই পথভ্রষ্ট বাঘ “খুন” হয়ে প্রমাণ করল, সে ছিল এবং ওই জঙ্গলেই ছিল৷
আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ
ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন : Click Here
অভিযোগ, শিকারিদের বল্লামের আঘাতে মৃত্যু হয় পূর্ণবয়স্ক বাঘের। তারপর থেকে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও ধরা পড়েনি কেউ। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গুড়গুড়িপাল থানার বাঘঘোরা এলাকায়। সে ঘটনার পর বন দফতরের বারবার তলব ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল এলাকাবাসীদের মধ্যে। শিকারে যাওয়া থেকে বিরত বাঘঘোরার মানুষজন। বৃহস্পতিবার ছিল বাঘঘোরাতে শিকারের নির্দিষ্ট দিন। বনকর্মীরা সকাল থেকে পাহারায় ছিলেন বিভিন্ন মোড়ে। বন দফতর থেকে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনার পর বাঘঘোরার মানুষজনের মধ্যে শিকারে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায় নি।
Tiger Death Case
তার পাশাপাশি ওই জঙ্গলে তিরিশটি হাতির একটি পাল রয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি প্রথম বাঘের উপস্থিতির খবর শোনা যায় শালবনীর মধুপুর এলাকায়। জঙ্গলে চরতে যাওয়া কয়েকটি গরু কোন অজানা প্রানীর আক্রমণে আহত হয়। এই ঘটনা বাঘের দ্বারা বলে প্রচার শুরু হয়ে যায়। অনেকে আবার নেকড়ে বা হায়না হতে পারে বলে সন্দেহ করেন। পরে বিভিন্ন এলাকায় বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়ার খবর দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেই আতঙ্ক। জঙ্গল লাগোয়া স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যায়।
এরপরই পরিস্থিতি সামাল দিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ লালগড়ের জঙ্গলে বসানো হয় সাতটি ট্র্যাপ ক্যামেরা। ২ মার্চ লালগড়ের মেলখেড়িয়ার জঙ্গলে বসানো একটি ক্যামেরায় ধরা পড়ে বাঘের ছবি। তারপরই এলাকায় বাঘ দেখার একদিকে উৎসাহ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আতঙ্কও বাড়ে মানুষের মধ্যে। সূর্য ডোবার আগেই বাড়ি ফেরার ধুম লেগে যায়। ৩ মার্চ বাঘ ধরার জন্য সুন্দরবন থেকে নিয়ে আসা হয় খাঁচা ও বিশেষজ্ঞ টিম। যেখানে বাঘের ছবি ধরা পড়ে তার আশেপাশে ছাগলের টোপ দিয়ে বসানো হয় খাঁচা। খাঁচার কাছ থেকে বাঘ ফিরে গেলেও ধরা দেয়নি ছাগলের ফাঁদে।
পরে বিভিন্ন এলাকায় মিলতে শুরু করে পায়ের ছাপ। এমনকি মেদিনীপুর শহরের কাছে মুড়কাটার জঙ্গলেও মেলে পায়ের ছাপ। ৮ ই মার্চ সেনাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে বাঘের খোঁজে আকাশে উড়ানো হল ড্রোন ক্যামেরা। কিন্তু দেখা মিলল না মহারাজের। ১৩ মার্চ বাঘের উপর নজরদারি রাখতে গিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় ঐরাবত গাড়ির ভেতরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারায় অমল চক্রবর্তী ও দামোদর মুর্ম্মু নামে দুই বনকর্মী।
সবরকম চেষ্টা করেও বাঘ ধরতে ব্যর্থ হয় বনদপ্তর! ৩০ মার্চ মেদিনীপুর বনবিভাগের চাঁদড়া রেঞ্জের বাঘঘোরার জঙ্গলে একটি সিমেন্টের সেচ পাইপের ভেতরে বাঘ থাকার খবর পেয়ে জাল দিয়ে ঘিরে ফেলেন বনকর্মীরা। কিন্তু বাঘ বেরিয়ে এসে গর্জন দিতেই জাল ফেলে দৌড় লাগালো বনকর্মীরা। ক্রিকেটে একটা প্রবাদ আছে, “ক্যাচ মিস মানে ম্যাচ মিস।” আর তাই হলো। সেইসময় জঙ্গলমহল জুড়ে চলছে শিকার উৎসব। ১৩ এপ্রিল বাঘঘোরার জঙ্গলে ছিল শিকার করার দিন। আর ওখানেই শিকারিদের বল্লামের খোঁচায় প্রাণ হারালো বাঘটি। তারপরই বনদপ্তরের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।
পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলো বাঘের মৃত্যু। শিকারিদের হাতে বাঘের মৃত্যুর পরেও এখনও চলছে শিকার উৎসব। অনেকেই সেই সময় প্রশ্ন তুলেছিলেন বাঘ মৃত্যুর দায় কি শুধু শিকারিদের? যারা বাঘটিকে রক্ষা করতে বা উদ্ধার করতে ব্যর্থ হল সেই বনদপ্তরের নই কি? বাঘ মৃত্যুর প্রায় দেড় বছর পর সেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে ব্যাঘ্র নিরাপত্তা বিষয়ক দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় দফতর। বাঘ মৃত্যুর ঘটনাস্থলও ঘুরে দেখেন। বাঘের নিরাপত্তায় বনদফতরের ভূমিকা নিয়েও অসন্তুষ্ট প্রকাশ করেছিলেন। তারপর থেকে তদন্ত কত দূর এগিয়ে বা কি রিপোর্ট জমা দিয়েছে তা জানা যায় নি। পাশাপাশি দোষীরাও অধরা!
আরও পড়ুন : মেদিনীপুর শহরের রাস্তায় যানজট এড়াতে টোটোতে রং, অটো-টোটো সংঘর্ষ এড়াতে একাধিক পদক্ষেপ
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Tiger Death Case
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper