পত্রিকা প্রতিনিধি: ৩৯৬ বছরের প্রাচীন রথযাত্রায় এবারে হবে নিয়ম-রক্ষার পূজো।করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে সমস্ত জায়গার রথের দড়িতে টান পড়বে না তাই গোপীবল্লভপুরেও রথে নেই সেই আগের জাকজমক। একটা রথের দড়িতে টান পড়বে, তবে তাও নিয়ম-রক্ষার।
৩৯৬ বছর ধরে গোপীবল্লভপুর এর রথযাত্রা মাহেশের পরেই সর্ববৃহৎ এই রথযাত্রা কিন্তু এবারে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে রথযাত্রার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্দির কমিটি। মন্দিরের মহন্ত শ্রী শ্রী কৃষ্ণ কেশব আনন্দ দেব গোস্বামী জানান এবছর কাপাসিয়া মাসি বাড়ি পর্যন্ত যাবে না তবে নিয়ম রক্ষার জন্য মন্দির থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে একটা অস্থায়ী মাসি বাড়ি তৈরি হয়েছে সেখানে সামাজিক সরকারি সমস্ত নিয়ম মেনেই ৯ দিন ধরে চলবে সমস্ত পূজা-পার্বণ। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের শ্রীচৈতন্য দেবের অবতার রূপে বন্দিত রোহিণী যুবরাজ যুগপুরুষ’ রসিকানন্দ প্রভু ১৬২৫ খ্রিস্টাব্দে সিপাহী বল্লভপুরের রথযাত্রার প্রবর্তন করেন। জগদগুরু শ্যামানন্দ প্রভু পৌরহিত্যে শ্রী জগন্নাথ ,বলরাম, সুভদ্রার জন্য তিনটি বড় রথে রথ যাত্রার সূচনা হয়। তৎকাল মহারাজ বন্দোপাধ্যায় প্রতিবছর তিনটি রথ নির্মাণের প্রতিজ্ঞা করেন সেই থেকেই হয়ে আসছে রথযাত্রা। পুরীর শ্রী জগন্নাথের স্বপ্নাদেশে শ্রী রসিকানন্দ প্রভুর শিষ্য পুরীর রাজা গজপতি লাঙ্গুলা নৃসিংহদেবে নব কলেবরের সময় পুরীর জগন্নাথের চারটি বিগ্রহ ( জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা ও সুদর্শন) এবং গোপীবল্লভপুরের শ্রী জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা বিগ্রহ একি বৃক্ষের কাঠ দ্বারা নির্মাণ করান। একটি পুরীর মন্দিরের বিরাজিত হয় এবং অন্য বিগ্রহ গোপীবল্লভপুর শ্রী গোবিন্দ মন্দিরে বিরাজিত হয়। সেই বছর থেকে দিল্লির মোগল রাজদরবার থেকে প্রতিবছর রথ যাত্রার উৎসবে ভেট আসতো
। ধর্মজগতে গোপীবল্লবপুর রথ যাত্রার গুরুত্ব অপরিসীম কারণ প্রায় ৩৫০০ অধিক মঠ মন্দির আশ্রম সমূহের প্রধান কার্যালয় ।
গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রার বাংলা দ্বিতীয় প্রাচীনতম রথযাত্রা। প্রান্তিক বাংলার নানা দুর্দশার আরণ্যিক জীবনের মধ্যেও পারম্পরিক নিষ্ঠা ও মর্যাদায় আজও প্রান্তিয়। গোপীবল্লভপুর এককালে ছিল কাশিপুর। শ্যামানন্দ ও রসিকানন্দে বদান্যতায় আজ সমৃদ্ধ জনপদে পরিণত। গোপীবল্লভপুর এর নানা উত্থান-পতনের সাক্ষী মানব সভ্যতার অন্ধকারাচ্ছন্ন অধ্যায় সবই দেখা সুবর্ণরেখা এই জগতপাদটির। মাঝখানে ময়ূরভঞ্জ মহারাজ জমিদারি প্রথার বিলোপের জন্য রথের কার্ড দিতে না পারায় তৎকালীন মোহন্ত মহারাজ শ্রী শ্রী গোপাল গোবিন্দ দেব গোস্বামী সুদৃশ্য নতুন রথ যাত্রার প্রবর্তন ও প্রবর্তক ।শ্রীকৃষ্ণ কেশবানন্দ আগে ৩৬ হাজার একর সম্পত্তি জমিদারি আজ ইতিহাসের পাতায় তা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ ভক্তের সমাগম রথযাত্রার হয়ে আসছে ।