পত্রিকা প্রতিনিধি: করোনা সংক্রামন ঠেকাতে জন্য এবার বন্ধ রাখা হল প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন কাঁথির ডেমুরিয়ার রথযাত্রা। ইতিমধ্যে জেলার অন্যতম শতাব্দীপ্রাচীন মহিষাদলের রথযাত্রা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।এমতাবস্থায় জমায়েত এড়ানোর জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৩০০ বছরের প্রাচীন ডেমুরিয়ার রথ। রথ টানা বন্ধের পাশাপাশি এবছর বসবে না কোন রথের মেলা। তবে প্রভু জগন্নাথের ভক্তরা রথের দিন প্রভুকে দর্শন করতে পারবেন। মূল রথ ও ফেরত রথের দিন প্রাচীন রীতি মেনে রাজ বেশে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে তোলা হবে রথের ওপর।
ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়,আজ থেকে প্রায় ৩০০বছর আগে ওড়িশার বাসিন্দা মগ্নীনারায়ন চৌধুরী ডেমুরিয়াতে বসবাসের উদ্দেশ্যে আসেন। তাঁর এক অন্যতম ইচ্ছা ছিল রথের সময় তীর্থযাত্রীদের পুরী দর্শনে নিয়ে যাওয়া। তিনি তাঁর এই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপায়ন করতে প্রত্যেক বছর তিনি বহু তীর্থযাত্রীকে পায়ে হেঁটে পুরী দর্শনে নিয়ে যেতেন। এরপর তিনি বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও তাঁর ইচ্ছাকে প্রতিহত করেননি।
প্রভু জগন্নাথ মগ্নীনারায়নকে স্বপ্নের মধ্যে বলেন সে যেন আর কষ্ট করে পুরী না আসে,বরং তার বাড়ির কাছে যেন জগন্নাথদেবের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে তাতেই মগ্নীনারায়নের পুরী আসার পূর্ণ লাভ হবে।এরপর মগ্নীনারায়ন বাড়ি ফিরে গিয়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার মাটির মূর্তি গড়ে পূজোপাঠ শুরু করেন।এরপর মগ্নীনারায়নের মৃত্যুর পরে ১৭৪৩সালে বর্গীরা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা দখল করে নেয়।যা ১৭৫২সাল পর্যন্ত এই দখল অব্যাহত থাকে। বর্গীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের হলেও তার এইসময় প্রচুর পরিমাণে হিন্দু মন্দির লুঠ করতো। সেই সময় মগ্নীনারায়নের উত্তরাধিকারীরা জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রার নিরাপত্তার জন্য প্রতিবেশী করুণাকরন পাহাড়ির বাড়িতে জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রাকে লুকিয়ে রাখেন।
তাছাড়া জগন্নাথদেবের সেদিনের সেই মাটির মন্দির আজ পাকাপোক্ত ভাবে গড়ে উঠেছে। কিন্তু সেদিনের নিয়ম মেনে আজও মগ্নীনারায়নের পরিবারের লোকজনেরা ভোগ রান্না করে জগন্নাথ,বলরাম, সুভদ্রার কাছে নিবেদন করেন এবং করুণাকরনের পরিবারের লোকজনেরা আজও জগন্নাথদেবের সেবাদাতা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। আর প্রত্যেকবছর পুরীর রীতি মেনেই রথের দিন তিনটি পৃথক রথে চড়ে জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা মাসির বাড়িতে যাত্রা করেন। কিন্তু চলতি বছরে করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে প্রাচীন এই রথযাত্রা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রথযাত্রা বন্ধ থাকলেও মূল রথ ও ফেরত রথের দিন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে দর্শন করতে পারবেন দর্শনার্থীরা।
রথযাত্রা কমিটির সম্পাদক তমালতরু দাস মহাপাত্র বলেন, “করোনা সংক্রামনের কথা মাথায় রেখে এ বছর আমরা রথযাত্রার বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে মূল রথ ও ফেরত রথের দিন সামাজিক দূরত্ব মেনে ভক্তরা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে দর্শন করতে পারবেন।