Home » শুভেন্দুর দলবদলের পর তৃণমূল নেতারা অধিকারী পরিবারকে নিশানা করায় ‘ব্যথিত’ শিশির

শুভেন্দুর দলবদলের পর তৃণমূল নেতারা অধিকারী পরিবারকে নিশানা করায় ‘ব্যথিত’ শিশির

by Biplabi Sabyasachi
0 comments

Shishir’s statement

আরও পড়ুন ঃ-“রাজনীতি করতে এসে গনতন্ত্রের গলা টিপে দিয়েছেন, সমস্ত কিছুর জবাব মে মাসে তৃণমূল পাবে” মন্তব্য দিলীপের

পত্রিকা প্রতিনিধি : বিজেপিতে যোগদানের পরেই শুভেন্দু অধিকারীকে ‘মিরজাফর’, ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলা হচ্ছে তাঁকে তাঁর পরিবারকে। তবে কাঁথিতে তাঁর বাড়ির অদূরে মাইক লাগিয়ে জনসভা করায় সে সব বিশেষণ তাঁর কানেও পৌঁছেছে। তবে পুত্র শুভেন্দু অধিকারী আগেই বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন।তারপর শুক্রবার আরেক পুত্র তথা কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রশাসক সৌম্যেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে অধিকারী পরিবারের কর্তা  কাঁথির সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিশির অধিকারী সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, ‘‘ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে জবাব পাবে। জবাব দেবেন মেদিনীপুরের মানুষ। আমি যখন তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম, অবিভক্ত মেদিনীপুরে একটাও নির্বাচিত পদ ছিল না। আমি যোগ দেওয়ার পর দলে দলে সকলে যোগ দিল। আর আমি এখন হলাম মিরজাফর! আমি হলাম বিশ্বাসঘাতক! বাহ্! ’’ঘটনাচক্রে, শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার আগে থেকেই রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম তাঁকে ‘মিরজাফর’ বলতে শুরু করেছিলেন। শুভেন্দু যোগ দেওয়ার পর তাঁকে একাধিক বার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘অধিকারি পরিবারটাই মিরজাফর!’’ সে খবর পৌঁছেছে অশীতিপর শিশিরের কানে। এবং তিনি হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘মিরজাফর তো মুসলমান বলে জানতাম! তবে ববি ভাল ছেলে। ও ভাল থাকুক। আমার পরিবারকে ববি গাল দিলে আমার কিছু যায়-আসে না।’’

ফাইল চিত্র

আপাতত একাশি বছর বয়স চলছে শিশিরবাবুর। করোনা সংক্রমণের ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ শিশিরবাবুর। তাঁর কথায়, ছেলেরা বাড়ি থেকে বেরোতে কঠোর ভাবে বারণ করে দিয়েছে। বলেছে ভ্যাকসিনের জন্য অপেক্ষা করতে। ছেলেদের বারণ মেনে আপাতত বাড়িতে বসে ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেলেই দিল্লি যাব। তার আগে পর্যন্ত বাড়িতে থাকব। হরেকৃষ্ণ করব। আমরা তো চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ ছিলাম। চৈতন্য মহাপ্রভু আসার পর অধিকারী হয়েছি। আমাদের বাড়িতে রাধামাধবের পুজো হয় প্রতিদিন। এখনও অধিকারী পরিবারকে দলমত নির্বিশেষে লোকে ভালবাসে। এখনও রোজ প্রায় ২,০০০ ফোন ধরি। ৫০০ লোক বাড়িতে এসে কথা বলে। তাদের সঙ্গে সুখদুঃখের কথা বলি। দিন কেটে যায়।’’ কিন্তু তিনি তো এখনও পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি আছেন বলায় শিশিরবাবুর গলায় খানিকটা শ্লেষ, ‘‘জেলা সভাপতি এখনও আছি কি না জানি না! কিছুই জানি না! না দিস সাইড, না দ্যাট সাইড। আগেকার পার্টিতে (কংগ্রেস) বুড়ো লোকেরা থাকতে পারত। থাকতে দিত। এখনকার পার্টিতে (তৃণমূল) ৮০ বছরের বেশি লোককে তো রাখে না!’’ কিন্তু পাশাপাশিই বলেন, ‘‘আমি কিন্তু এখনও নেত্রীর সঙ্গেই আছি। ববি, সৌগত রায় এসে কুৎসিত ভাষায় গালিগালাজ করে বক্তৃতা দিয়েছে। সৌগতবাবু এই শহরে দাঁড়িয়ে আমার আর আমার পরিবারের নামে যা বলেছেন, তা কেউ কোনওদিন বলেনি! এত জঘন্য ভাষায় আমার পরিবারকে আক্রমণ করা হল!’’

তিনি বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাচ্ছেন না কেন? প্রবীণ নেতা ও সাংসদের জবাব, ‘‘আমার ফোন করার দরকার নেই। ওঁর কাছে কি আমার ফোন নম্বর নেই? উনি আমায় শেষবার ফোন করেছিলেন যখন আমার পায়ে অপারেশন হয়েছিল। এ সব ঘটনা তো তার পরে ঘটেছে। উনি তো আমায় একটা ফোন করেননি! শুভেন্দু অনেক ভাবে অপমানিত হয়ে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সে আমাকে বলেওনি। আমার ছোট ছেলে সৌম্যেন্দু তো অধিকারী বাড়িতে নেত্রীর সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিল। কেউ নেত্রীর নামে দুটো কথা বললে টেবিলের উপর উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করত। পারলে চড়চাপড়ও লাগিয়ে দিত। ওকে যে ভাবে সরানো হল, সেটা কি গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে? ও মধ্যপ্রদেশের মহাকাল মন্দিরে গিয়েছিল। সেখানে গেলে সকলকেই কপালে গেরুয়া সিঁদুরের টিপ পরতে হয়। ওকেও পরতে হয়েছিল। সেই ছবিটা দেখে সকলে ধরে নিল, ও বিজেপি হয়ে গিয়েছে! তার পরেই ওকে সরিয়ে দেওয়া হল প্রশাসকের পদ থেকে! এটা কি ন্যায়বিচার হল?’’ স্পষ্টতই কাঁথি পুরসভার প্রশাসক পদ থেকে যে ভাবে সৌম্যেন্দুকে সরানো হয়েছে, তা নিয়েও ক্ষোভ এবং অনুযোগ রয়েছে শিশিরের। তাঁর কথায়, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট তো মামলাটা নিয়েছে। দেখুন ৪ জানুয়ারি শুনানিতে কী হয়!’’  শিশিরবাবু আরও বলেন, ‘‘আমার বাবাকে সুভাষচন্দ্র বসু হাতে করে খাইয়ে দিয়েছিলেন। উনি আমাদের আগের বাড়ির উঠোনে চৌকি পেতে মিটিং করেছেন। আমার বাবা কলকাতায় প্রতি মাসে সুভাষবাবুর বাড়িতে যেতেন।

অন্তর্ধান হওয়ার সময়েও উনি আমাদের বাড়ির উপর দিয়ে গিয়েছেন। এ সব কথা আমি কাউকে কখনও বলি না। কিন্তু এখন এমন সময় এসেছে যে, এই কথাগুলোও বলতে হচ্ছে!’’ আরও বলেন, ‘‘ওঁরা কি কেউ নন্দীগ্রামের রাস্তা চিনতেন? চিনতেন না! নন্দীগ্রাম মানুষের আন্দোলন। কিন্তু তাতে এই অধিকারী পরিবারেরও একটা ভূমিকা ছিল। সেটা এখন সকলে ভুলে গেলেন?’’ জেলা সভাপতি পদে এখনও আছেন। কিন্তু আপাতত রাজনৈতিক কর্মসূচি সব বন্ধ রেখেছেন অধিকারী পরিবারের দোর্দন্ডপ্রতাপ কর্তা। কাঁথিতে দলের সভায় যাননি। নন্দীগ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সভা হলেও সভাতেও যেতেন না।তাছাড়া আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে দল যা বলছে, তা ঠিক নয়। মমতা এখনও আমার নেত্রী। আমি তাঁর বিরুদ্ধে কোথাও একটিও কথা বলিনি। কিন্তু আমাদের পরিবারের অপমানের জবাব ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে দেবেন মেদিনীপুরের মানুষ।

লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi

Shishir’s statement

– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper In Midnapore

You may also like

Adblock Detected

Please support us by disabling your AdBlocker extension from your browsers for our website.