বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ষষ্ঠ সেমেস্টারের একটি প্রশ্নকে ঘিরে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছে শিক্ষকমহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণসংগঠনগুলিও। বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সমস্ত কলেজগুলির ষষ্ঠ সেমেস্টারের ইতিহাস অনার্সের সি ১৪ পেপারের “মর্ডান ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া” পরীক্ষা ছিল। ওই পেপারের ‘ক’ বিভাগের ১২ নম্বর দাগের প্রশ্ন ছিল, ‘মেদিনীপুরের তিন জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নাম কর যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন?’ এই প্রশ্ন ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। উপনিবেশিক মানসিকতা নিয়ে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে বলে দাবি অনেকেরই। শহীদ প্রশস্তি সমিতির পক্ষ থেকে একটি চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ই-মেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানান শহীদ প্রশস্তি সমিতির সম্পাদক প্রাণতোষ মাইতি। তিনি বলেন, “এই ইতিহাস ভুলে যাওয়ার নয় যে, মেদিনীপুরের বীর বিপ্লবী স্বাধীনতা সংগ্রামীরা সেদিন ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের লুণ্ঠন, হত্যা, দাঙ্গা, ষড়যন্ত্র ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ সংগ্রাম পরিচালনা করেছিলেন।” শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিংকর অধিকারী বলেন, “এখন ইংরেজ আমল নয়, স্বাধীন ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইতিহাসের প্রশ্নপত্রে বিপ্লবীদের যেভাবে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে তা অত্যন্ত আপত্তিজনক এবং দূরভিসন্ধিমূলক। ছাত্র-ছাত্রী এবং সমাজের কাছে এইসব স্মরণীয় বিপ্লবী চরিত্রকে কালিমালিপ্ত করার প্রয়াসকে ধিক্কার জানাই। অবিলম্বে ইতিহাস বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তরের পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে প্রতিবাদ জানানো হোক। না হলে মনে করব ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করা হয়েছে। অবিলম্বে ভুল স্বীকার করে সর্বসমক্ষে বিবৃতি দাবি করছি।”
আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ
ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন :
For WhatsApp Group : Click Here

আরও পড়ুন : নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি! ফুঁসছে কংসাবতী
ত্রিশের দশকে সারাদেশ জুড়ে আইন অমান্য আন্দোলনের সময় মেদিনীপুরের অত্যাচারী জেলাশাসক জেমস পেডি স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন করতে জেলা জুড়ে অত্যাচারের নারকীয় পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। প্রকাশ্যে, কারার অন্তরালে, ফাঁসির মঞ্চে, দ্বীপান্তরে ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের প্রবল অত্যাচারকে রুখতে বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্সের নির্ভীক সৈনিকরা সেদিন প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মেদিনীপুরের বিপ্লবীরা স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তলেখা ইতিহাস তৈরি করে। ১৯৩১ সালের ৭ই এপ্রিল বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত ও বিপ্লবী জ্যোতি জীবন ঘোষ মেদিনীপুর শহরের কলেজিয়েট স্কুলের অভ্যন্তরে অত্যাচারী জেলাশাসক পেডিকে হত্যা করেন। ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল জেলা বোর্ডের মিটিংয়ে বিপ্লবী প্রদ্যোত ভট্টাচার্য ও বিপ্লবী প্রভাংশু পাল অত্যাচারী জেলা শাসক ডগলাসকে হত্যা করেন।

১৯৩৩ সালের ২রা সেপ্টেম্বর পুলিশ গ্রাউন্ড ফুটবল মাঠে বিপ্লবী অনাথ বন্ধু পাঁজা ও বিপ্লবী মৃগেন দত্ত জেলাশাসক বার্জকে হত্যা করেছিলেন। বিপ্লবীরা শহীদের মৃত্যুবরণ করে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করে মেদিনীপুরকে গৌরবান্বিত করেছিল। প্রাণতোষ মাইতি বলেন, “মেদিনীপুরের সেই ইতিহাসকে ভুলিয়ে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস চর্চায় বিপ্লবীরা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে পরিচিত। সরকারের পরিচালিত শিক্ষার পাঠ্যপুস্তকে তাই ক্ষুদিরাম বসু, মাস্টারদা সূর্য সেন, ভগৎ সিংরা সন্ত্রাসবাদী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন। বিপ্লবীদের চিন্তা চেতনা অনুযায়ী দেশের শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হলে বর্তমান শাসকদের বিপদ হবে। তাই তারা বিপ্লবীদের প্রকৃত চরিত্রকে জনগণের সামনে নিয়ে আসেন না, চর্চা করেন না। তিনি অবিলম্বে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে এই ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানান।”
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Exam Controversy
Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspape