অরুপ নন্দী: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাঘঘরার জঙ্গলে শিকারীদের হাতে খুন হয়েছিল পথভ্রষ্ট বাঘ। তারপর থেকে শিকারে যাওয়া বন্ধ করে সেদিনের ঘটনায় আজও আফশোস করে অনুতপ্ত বাঘঘরার মানুষজন। জঙ্গলমহল জুড়ে বনদপ্তরের পক্ষ থেকে সচেতনতার প্রচার চললেও কিছু মানুষজন এখনও পশু পাখি শিকারে জঙ্গলে যায়। কিন্তু জঙ্গলমহলের বহু মানুষ বাঘঘরার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এলাকার পশুপাখি বাঁচিয়ে রাখতে আজ বদ্ধপরিকর।
তেমনই একটি এলাকায় পাখিদের বাসা বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত পাহারায় এলাকাবাসী। ঘটনাটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর গোলকচকে। গ্রামের মধ্যেই বাঁশ বাগানে শতাধিক বক বাসা বেঁধেছে। রয়েছে ছোট বক, গো বক, কোর্চে বক এর মত বিভিন্ন প্রজাতি। এদের কেউ ডিম দিয়েছে, কারও সদ্য বাচ্চা হয়েছে। সারাদিন এডালে, ওডালে উড়ে বেড়াচ্ছে। কেউ বা বাচ্চা রেখে চলে গিয়েছে খাবারের সন্ধানে। সারা এলাকা জুড়ে তাদের হাঁকডাকে কান পাতা দায়। তবে সারা বছর নয়, মাস চারেকের জন্য এখানে বাসা বেঁধে থাকে কয়েকশ বক জানালেন স্থানীয়রা।
কিন্তু এত পাখি একসঙ্গে থাকলে শিকারীদের তো সুবিধা শিকার করতে! কিন্তু তা হওয়ার জো নেই, এই পাখিদের নিরাপত্তার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন পাহারায় থাকেন গ্রামের মানুষজন। বাঁশ বাগানের সামনেই রয়েছে বসত বাড়ি, রয়েছে জমি। ফলে সবসময় কেউ না কেউ ঠিক লক্ষ্য রাখে যাতে কেউ পাখি মারতে না পারে। এলাকার ছোট বাচ্চারাও নিয়মিত নজরে রাখে তাদের বন্ধুদের।
একসঙ্গে এতো পাখি দেখে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়তেই কিছুক্ষণের মধ্যে হাজির হল ছেলের দল, আগন্তুক কি করছে তা দেখার জন্য। হাতে ক্যামেরা দেখে তারা নিশ্চিন্ত হল! তাদের কাছে জানতে চাইলাম, এত পাখি আছে, কেউ এদের শিকার করেনা? তারা বলল, কিছু মানুষ পাখি শিকার করতে আসে, তাদের দেখলেই আমরা বাধা দিই।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিকারীদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি থেকে তুমুল তর্কও হয়েছে পাখি বাঁচাতে। তারা ফিরে গেছে। পাখিদের কোনও ক্ষতি হতে দিইনি। প্রতিবছর এই পাখিগুলো এখানে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা একটু বড় হওয়া পর্যন্ত থাকে তারপর চলে যায়।