পত্রিকা প্রতিনিধি: করোনা আবহে একাধি রদবদল হচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন মহিষাদল রাজবাড়ির ২৪৫ বছরের দুর্গাপুজোয়। সরকারি বিধি মেনেই পুজিত হবে মা। রাজাদের সেকেলে রাজত্ব আজ আর না থাকলেও রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় আজও রয়ে গেছে সেকালের পুজোর প্রাচীন নিয়ম কানুন সমূহ। প্রতিবছর পতিপদ থেকে রাজবাড়ির পুজো ঢাক, ঢোল, কাঁসর-ঘন্টা ধ্বনি সহযোগে মহিষাদল রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুর থেকে দুর্গাপুজোর ঘট স্থাপন করা হত। মূলত এদিন থেকে দশমী পর্যন্ত চলত রাজবাড়ির পুজো। কিন্তু এবছর পতিপদ পুজোর একমাস আগে পড়ায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারনে তা করা সম্ভব না হলেও পুজোর কয়েকদিন আগে শুরু হবে পুজো। চলছে তরই শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। Mahishadal, Mahishadal, Mahishadal, Purba Medinipur News, East Medinipur News, Biplabi Sabyasachi News, Mahishadal
আরও পড়ুন- পটাশপুরে বিরল প্রজাতির ‘গিটার’ মাছ উদ্ধার
ইতিহাসের পাতা ঘাটলে জানা যায়, ১৭৭৪ সালে রাজা আনন্দলাল উপাধ্যায়ের স্ত্রী রাণী জানকির হাত ধরে সূচনা হয় মহিষাদল রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর। এরপর থেকেই ক্রমে ক্রমে প্রজন্মের হাত ধরে চলে আসছে মহিষাদল রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। একসময় এই রাজবাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে উদ্দিপনায় মেতে উঠতেন মহিষাদলসহ আশেপাশের অঞ্চলগুলির মানুষজন। কিন্তু রাজাদের সেকেলে রাজত্ব হারানোর সঙ্গে সঙ্গে আজ মানুষের মধ্যে হারিয়েছে এই প্রাচীন রাজবাড়ী দুর্গাপুজোর আমেজ। তবে পুজোর আমেজ আজ আর আগের মতো না থাকলেও পুজোর ক্ষেত্রে আজও মেনে চলা হয় প্রাচীন বহু নিয়ম কানুন। পুজোর সূচনাকাল থেকেই চলে আসছে প্রতিপদ থেকে রাজবাড়ীতে পুজো শুরু হওয়ার প্রথা কিন্তু করোনা আবহের করনে এবার পতিপদ থেকে পুজো শুরু না হলেও পুজোর কয়েকটা দিন নিয়ম নিষ্ঠা মেনে হবে বলে জানান রাজ পরিবারের বর্তমান সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ। প্রথমা থেকে দশমী পর্যন্ত প্রত্যেকদিনই রাজবাড়ীতে থাকে দেবীর ভোগ রান্নার আয়োজন করা। ষষ্ঠীতে ছয় মন চালের ভোগ, সপ্তমীতে আট মন চালের ভোগ, অষ্টমীতে আট মন চালের ভোগ এভাবেই তিথি মেনে রাজবাড়ীতে এককালে চলতো ভোগ রান্নার আয়োজন। কিন্তু আজতা জৌলুস হারিয়ে ভোগে চালের পরিমাণ কমলেও তা আজ প্রথা মেনেই হবে। পুজোর কয়েকটাদিন কোনোরকম ‘যুদ্ধ নয় শান্তি চাই’ এই বার্তা সকলকে দেওয়ার জন্য রাজ পরিবারের সমস্ত তলোয়ার, অস্ত্রশস্ত্র রাখা হয় দেবীর পায়ের তলায়। এছাড়াও পুজোর দিনগুলো সাংস্কৃতিক বিনোদনের জন্য থাকতো বিশেষ শাস্ত্রীয় সংগীত, যাত্রাপালা গান প্রভৃতির ব্যবস্থা। কিন্তু আজ তা করা সম্ভব হবে না। সেই কারনে সমস্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। অষ্টমীতে সন্ধিপুজোর জন্য রাজবাড়ীতে সুদূর কেদারনাথ, বদ্রিনাথ থেকে আসতো ১০৮ টি নীল পদ্ম। কিন্তু এই নিয়ম আজ আর তেমনভাবে পালন করা হয় না।
আরও পড়ুন- ‘সব তো দিয়েছি, এবার আপনারা কিছু দিন’ ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মন্তব্য মমতার
একসময় মহাষ্টমীর দিন দেবীর সন্ধীপুজোর সময় রাজ্যবাসীকে জানান দেওয়ার জন্য পুজো শুরু হওয়ার সময় রাজবাড়ির কামান দাগা হত এবং শেষেও দাগা হত কামান। কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক বছর আগে প্রশাসনের তরফ থেকে শব্দ বিধি জারি করার ফলে উঠে যায় এই কামান দাগার প্রথা। এর পরিবর্তে চলে পটকা ফাটানো। পুজো আসলে আজও রাজবাড়ির দুর্গা মন্ডপে পড়ে রঙের প্রলেপ। নানা রঙে সেজে ওঠে আটচালার এই দুর্গা মন্ডপ। প্রায় দু’মাস ধরে চলে রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমা তৈরীর কাজও। হলুদ বর্ণের প্রতিমা সহ পটল চেরা চোখ ও টাকের গহনার সাজে আজও সেজে ওঠেন দেবী। রাজবাড়ির মৃৎশিল্পী গোপাল চন্দ্র ভূঁইয়া জানান,”আমি কয়েক বছর ধরে রাজবাড়ির প্রতিমা তৈরি করে আসছি। রাজবাড়িতে আগের সেই প্রাচীন নিয়ম কানুন মেনেই তৈরি করা হয় প্রতিমা। এখানকার দেবীর গায়ের রঙ সমগ্র জেলায় একমাত্র এখানেই এই রঙ করা হয়।” অর্থাৎ আজও বলাই চলে প্রতিমার বিশেষত্ব ছাড়াও বহু নিয়ম কানুনই আজও মানা হয় মহিষাদল রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোয়। দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের দিন আগে নৌকা করে প্রতিমা নিয়ে যাওয়া হতো রূপনারায়ণের মাঝনদীতে। আর সেখানেই হতো প্রতিমা বিসর্জনের কাজ। কিন্তু বর্তমানে রাজবাড়ির প্রাচীন পুকুরেই দেওয়া হয় দেবীর বিসর্জন। বিসর্জনের রীতির সঙ্গে সঙ্গে আজ রাজবাড়ীতে বদলেছে প্রাচীন সেই পর্দা প্রথাও। আগে পুজো জাঁকজমক করে হলেও রাজ পরিবারের মহিলা সদস্যারা থাকতেন পর্দার আড়ালে। কিন্তু এখন রাজ পরিবারের মহিলারা থাকেন পর্দার এপারেই। রাজ পরিবারের সদস্য হরপ্রসাদ গর্গ জানান,”পর্দাপ্রথা আমাদের রাজ পরিবারের প্রাচীন এক ঐতিহ্য। আগে রাজ পরিবারের সমস্ত অনুষ্ঠানে মহিলারা থাকতেন পর্দার আড়ালে। কিন্তু এখন সময়ের বদলের সাথে সাথে এই পর্দাপ্রথা আজ আর নেই।” দশমীর দিন এখানে সিন্দুর খেলার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে মহিলারা হাজির হতেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে করোনা আবহে তা করা সম্ভব হবে না। সরকারি নিয়ম মেনে স্থানিয় প্রশানের পরামর্শ অনুসারে করা হবে।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasach