ওয়েব ডেস্ক, বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : খাবারের খোঁজে বারবার জঙ্গল ছেড়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে হাতির দল। দাঁতালের তাণ্ডবে ক্ষতি হয় ঘরবাড়ি ও ফসলের। এ বার জঙ্গলে হাতির খাবারের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হল গুড়গুড়িপাল উচ্চ বিদ্যালয়। এ জন্য জঙ্গল এলাকায় ছড়ালো হাতির খাদ্যপোযোগী দুই কুইন্ট্যাল আম, কাঁঠালের বীজ। একটি পূর্ণবয়স্ক হাতির দিনে একশো কিলোগ্রাম খাবার লাগে।
হাতির সেই খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে ওই এলাকার জঙ্গল। পর্যাপ্ত খাবার না-পেয়ে হাতির দল হানা দিচ্ছে জমির ফসলে, গৃহস্থের বাড়িতে। বাড়ছে হাতি ও মানুষের সংঘাত। জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ের মানুষজনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। সেইসব দিক চিন্তা করে বৃহস্পতিবার মেদিনীপুর গ্রামীণের গুড়গুড়িপালের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে আম, কাঁঠালের বীজ ছড়ালো গুড়গুড়িপাল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরা।
14-20 জুলাই বনমহোৎসব উপলক্ষ্যে রাজ্য জুড়ে চলছে বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচী। মেদিনীপুর বনবিভাগের বনকর্মীদের সংগঠনের অরণ্য শাখার পক্ষ থেকেও গুড়গুড়িপাল ইকো পার্কে বৃক্ষ রোপণ করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অনুপ মান্না, সম্পাদক প্রকাশ মজুমদার, সুশান্ত রায়। সংগঠনের সম্পাদক মলয় নন্দী বলেন, “অনেকেই বৃক্ষ রোপণ করে কিন্তু যত্ন নেই না।
রোপণের পাশাপাশি যত্নের দিকটা একটু লক্ষ্য রাখলেই সবুজে ভরে উঠবে মেদিনীপুর।” এদিন গুড়গুড়িপাল স্কুলের কর্মসূচীতেও অংশ নেন বনকর্মীরা। স্কুলের শিক্ষক ব্রজদুলাল গিরি, লাল্টু জানার উদ্যোগে দুই কুইন্ট্যাল ফলের বীজ সংগ্রহ করেছিল ছাত্র ছাত্রীদের মাধ্যমে। বাড়িতে আম, কাঁঠাল ফল খাওয়ার পর বীজগুলো স্কুলে আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন ওই শিক্ষকরা। প্রধান শিক্ষক গৌতম ভৌমিক বলেন, “অরণ্যের ঘনত্ব দিন দিন কমছে।
তাই বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি ছড়িয়ে দেওয়া বীজ থেকেও গাছ হলে কিছুটা হলেও এলাকায় অরণ্যের ঘনত্ব বৃদ্ধি পাবে।” শুধু আম, কাঁঠাল বীজ কেন? শিক্ষক ব্রজদুলাল গিরি, লাল্টু জানা বলেন, “এই এলাকা হাতি উপদ্রব। প্রতিনিয়ত হাতির হানা লেগেই থাকে। সম্প্রতি ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বহু বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। তার মূল কারণ জঙ্গলে খাদ্যের অভাব। হাতি খাই এমন ফল গাছ নেই জঙ্গলে। এমনকি কমেছে জঙ্গলের ঘনত্বও।
ফলে খাবারের খোঁজে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে হাতির পাল। যাতে হাতিকে যতটা সম্ভব জঙ্গলে আটকে রাখা যায় তার জন্য আম কাঁঠাল বীজ ছড়ানো হয়েছে। গাছগুলি হলে হাতির খাদ্যের চাহিদা কিছুটা হলেও মিটবে।” এভাবে কতটা সফল হবেন? তারা বলেন, “প্রথম বছর চেষ্টা করলাম। সফল না হলে পরবর্তী দিনে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বর্তমানে হাতির হানায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমি। মিলে না সময়ে ক্ষতিপূরণও। যতটুকু মেলে তাও যথেষ্ট নয়।
ইদানিং লোকালয়ে হাতির হানা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠছে, মাঠের ফসল থেকেই যে-সব প্রান্তিক কৃষকের সংসার চলে, তাঁদের ফসল হাতির দল সাবাড় করে দিলে কৃষক পরিবারগুলি সারা বছর খাবে কী! তবে জঙ্গলে হাতি আটকে রাখার বিকল্প ব্যবস্থা নিক বন দফতর চাইছেন স্কুলের ছাত্র ছাত্রীরাও। তাদের মধ্যে স্নেহা দোলই, সৌবর্ণ ডেঙ্গুয়া, ইপ্সিতা পাত্র, রাজীব দাস-রা বলে, আমাদের এলাকায় হাতির হানায় প্রচুর ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
কষ্ট করে চাষ করেও বাড়িতে ফসল উঠে নি অনেক পরিবারের। জঙ্গলে ফলের গাছ লাগানো হলে অনেকটা রক্ষা পাবেন কৃষকরা।” স্কুলের এই কর্মসূচীতে চারা গাছ সহ জঙ্গলে ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সাহায্য করেছে বন দফতর। গুড়গুড়িপালের ভারপ্রাপ্ত বীট অফিসার সুশান্ত ঘোষ বলেন, “স্কুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। এই ভাবে সকলে এগিয়ে এলে বন ও বন্যপ্রাণ দুই রক্ষা পাবে।”
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Forest Festival
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper In Midnapo