পত্রিকা প্রতিনিধি: জেলা স্বাস্থ্য ভবনের শনিবারের (১৫ আগস্টের) করোনা রিপোর্ট অনুযায়ী, মেদিনীপুর শহরে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ জন। এর মধ্যে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে ৬ জন এবং আরটিপিসিআর (মেদিনীপুর মেডিক্যালের ভাইরাল ল্যাবরেটরি) অনুযায়ী ১৯ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে শনিবার রাতে। এদিনও দেখা গেছে বিভিন্ন পরিবারের একাধিক সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সর্বোপরি উল্লেখযোগ্য, মেদিনীপুর শহরে শুধু উপসর্গহীন করোনা আক্রান্তই নয়, উপসর্গযুক্ত আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সচেতনতাই পারে, সংক্রমণে কিছুটা হলেও লাগাম পরাতে!
মেদিনীপুর শহরের অন্যতম সংক্রমিত এলাকা বা করোনা হটস্পট এলাকা এই মুহূর্তে পাটনা বাজার এবং সংলগ্ন এলাকা। এদিন (শনিবার), পাটনা বাজারের এক স্বর্ণশিল্পী (৩৫), তাঁর স্ত্রী (৩২) ও তাঁর মা (৫৭) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনজনই উপসর্গযুক্ত করোনা আক্রান্ত। ওই স্বর্ণশিল্পী বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বরে ভুগছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর জ্বর আসে বলেও পরিবার সূত্রে জানা গেছে। সঙ্গে কাশির উপসর্গও আছে। তাঁর বৃদ্ধা মাও সংক্রমিত হয়েছেন এবং জ্বর ও প্রবল কাশির উপসর্গ আছে। স্ত্রী’র মধ্যে আস্বাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার উপসর্গ আছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, এই মুহূর্তে মেদিনীপুর শহরের যে কয়েকটি এলাকা সংক্রমিত রূপে পরিচিত হয়ে উঠেছে, বল্লভপুর ও মহতাবপুর তার মধ্যে অন্যতম। এদিনও, বল্লভপুরের একটি পরিবারের তিনজন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ঐ পরিবারের একজন সদস্য ইতিমধ্যে শালবনী করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জানা যায়, গত ১৪ ই আগস্ট করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি (৪৩) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। করোনা টেস্টের পর শুক্রবার তাঁর রিপোর্ট পজিটিভ আসে এবং তাঁকে শালবনী করোনা হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদিকে ঠিক একদিন পর, গতকাল (১৫ ই আগস্ট) ওই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির ছেলে (১৪), ভাই (৩৭) ও ভাইয়ের স্ত্রী (২৪) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ভাইয়ের স্ত্রী’র শরীরে (২৪) শ্বাসকষ্টের উপসর্গ আছে। তাঁর ভাই (৩৭) এরও জ্বরের উপসর্গ আছে। তবে, তাঁর ছেলের শরীরে বিশেষ উপসর্গ নেই বলে জানা গেছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বল্লভপুরে তাঁদের একটি ভূষিমাল বা মুদি দোকান রয়েছে। সেখান থেকেই বাড়ির দুই পুরুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে অনুমান এবং তাঁদের থেকেই বাকিরা সংক্রমিত বলেও সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়াও, এদিন জেলা স্বাস্থ্য ভবনের ৩ জন কর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তবে স্বাস্থ্য ভবনের এই কর্মীদের (৪৪, ৩৮, ৩৮) শরীরে বিশেষ উপসর্গ নেই বলে জানা গেছে। এদিকে, ডিএম বাংলো বা জেলাশাসকের আবাসনে ফের দু’জন নিরাপত্তা কর্মী (৩৯ ও ৩৩) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে বিশ্বস্ত সূত্রে। অপর দু’জন (৩৩ ও ৫১) করোনা আক্রান্ত পুলিশকর্মী মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে কর্তব্যরত ছিলেন বলে জানা গেছে। এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের এক ইন্টার্ন (২৩) ও এক জুনিয়র চিকিৎসক (২৭) এদিন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। তার মধ্যে ওই মহিলা ইন্টার্নের শরীরে গা-হাত-পা ব্যথার উপসর্গ ছিল। এছাড়াও একজন নার্স (২৭) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, কবরডাঙা এলাকার এক ব্যক্তি (৫০), নতুনবাজারের এক ব্যক্তি (৫৬) এবং সুদামপুকুরপাড়ের এক ব্যক্তি (৩৮) করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মহতাবপুর (১৯) ও মির্জাবাজার (২১) এর দুই যুবকও নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। উল্লেখ্য যে, মির্জাবাজার গোয়ালাপাড়ার একটি ২ বছরের শিশুর শরীরেও পাওয়া গেছে করোনা ভাইরাসের জীবাণু। ইতিমধ্যে, শিশুটির পরিবারের কয়েকজন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরতলীর পাঁচখুরি সহ কয়েকটি এলাকা থেকে আরো মোট ৩জন এদিন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে এদিন শহরে ২৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন নতুন করে।