৩৩ তম বর্ষ, ৩৬ সংখ্যা, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২ ভাদ্র ১৪২৭
শিল্প সংস্কারে পশ্চিমবঙ্গ ক্রমশ এগোচ্ছে এটা সুসংবাদ। কারণ এমনিতেই শিল্পের গতি এখন মন্দা, খোদ কেন্দ্রীয় সরকারই শিল্পের গতি ফেরাতে গিয়ে খাবি খাচ্ছে, তা পশ্চিমবঙ্গ তো একটি অঙ্গরাজ্য। দীর্ঘ ৩৪ বছর একটানা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকা সত্বেও পশ্চিমবঙ্গকে শিল্পোন্নত করতে তুলতে না পারার কুফল ভোগ করতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে। বিশাল পরিসর ছিল, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল, সরকারের শেকড় ছিল বেশ শক্তপোক্ত, সুদুর প্রসারী। বামফ্রন্ট জমানায় দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক কেন্দ্রে যে সব সরকার ক্ষমতায় ছিল তাঁদের কাছে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর প্রভাবও ছিল যথেষ্ট পোক্ত, কিন্তু তা সত্বেও রাজ্যকে শিল্পোন্নত করে তোলার ক্ষেত্রে বহুদিন কোনও বলিষ্ট পদক্ষেপ নেন নি। ‘৭৭ সালে ক্ষমতায় আসা ইস্তক তো কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে নিত্য নৈমিত্তিক বুর্জোয়া, টাটা-বিড়লাদের দালাল, শ্রমিক বিরোধী, মেহনতি- বিরোধী ইত্যাদি ইত্যাদি কমিউনিষ্ট সুলভ উত্তপ্ত শ্লোগান লাইনেন্স নীতির বিরুদ্ধে গলা ফাটিয়েছেন। এর ফলে রাজ্যে শিল্প গঠনের যেটুকু সুযোগ ছিল তার সদ্ব্যবহার না করায় শিল্পে পিছিয়ে যায় রাজ্য। ৯৬ সালে জ্যোতি বসুর সরকার কেন্দ্রের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে প্রথম শিল্পনীতি তৈরি করে মাঠে নামে। তারপর থেকে জ্যোতিবাবু নিজে এবং শিল্পোন্নয়ন নিগমের কর্তারা দেশ বিদেশ ঘুরে লগ্নি টানার চেষ্টা ক্রলেও তাতে প্রত্যাশিত সাফল্য আসেনি। ২০০০ সালে জ্যোতিবাবুর অবসরের পথ মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসে ২০১০ পর্যন্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিল্পায়নে জোর দেন ঠিকই, তাতে অজস্র কলকারখানা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে তা বলা চলে না। বামফ্রন্ট জমানায় যেসব শিল্প গড়ে উঠেছে, তার দ্বারা রাজ্য মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, গুজরাত, অন্ধ্রের সমকক্ষ হয়ে উঠেছে তা নয়। বিশাল সুযোগ ছিল, কিন্তু বামফ্রন্ট তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগায়নি। যার জন্য আজও বামেরা সমালোচিত হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এটা উপলব্ধি করেই ক্ষমতায় এসেই শিল্পে জোর দেন। নিজে সদলবলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গিয়ে শিল্পপতিদের কাছে বাংলাকে লগ্নির পীঠকেন্দ্র বলে উজ্জ্বল চিত্র তুলে ধরেছেন। লগ্নির আশ্বাস আদায় করে ছেড়েছেন। রাজ্যে প্রতি বছর মেগা গ্লোবাল বিজনেস সামিট করে দেশ বিদেশের বাঘা বাঘা শিল্পপতিদের টেনে এনেছেন এবং নিজেদের বাগ্মিতা ও আন্তরিকতার মধ্যে দিয়ে ধনকুবেরদের মন গলিয়ে ছেড়েছেন ফলে স্বক্ষরিত হয়েছে ‘মউ’। কিন্তু ঘটনা হল, বৃহৎ শিল্প কোথায় গড়ে উঠল ? মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন , রাজ্যে কর্মসংস্থানের হার বেড়েছে, শিল্পের গতি বেড়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প গড়ে উঠলেও বৃহৎ কলকারখানা এখনও গড়ে ওঠেনি। সুতরাং কেন্দ্রের বিচারে এ রাজ্যে যখন শিল্প সংস্কারে ১০ নম্বর থেকে ৯ নম্বরে উঠে এসেছে তখন তার দ্রুত সুফল তোলা জরুরী নয় কী ?