পত্রিকা প্রতিনিধি:নিখোঁজ থাকা এক গৃহবধূর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শালবনিতে । বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর রঘুনাথপুর গ্রামে। মৃতা’র নাম মোনালিসা মাইতি। বয়স আনুমানিক ৩০। স্বামী জয়ন্ত মাইতি কোতোয়ালি থানায় পুলিশে কর্মরত। মৃতার শ্বশুর বাড়ির পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যে প্রায় সাড়ে ছটা থেকে নিখোঁজ ছিল, এদিন সকালে রায়গড় শিব মন্দিরের পাশের বড়বাঁধ থেকে উদ্ধার করা হয় মৃতদেহ। ওই গৃহবধূর তিন বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। ঘটনায় এলাকাজুড়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। গৃহবধূটি খুন হয়েছে নাকি আত্মহত্যা করেছেন সেটা নিয়ে তদন্তে নেমেছে শালবনী থানার পুলিশ। মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল (বুধবার) বিকেল ৫.৩০টা – ৬ টা নাগাদ ওই গৃহবধূ (মোনালিসা মাইতি) তার জা’ এর সাথে মাঠের ধারে পুকুরে গিয়েছিল। এরপর, মোনালিসা’র জা ফিরে এলেও সে ফেরেনি! তার জা পরিবারের লোকেদের জানায়, মোনালিসা আসতে চাইছে না! এরপর, তার পরিবারের লোকেরা ওই মাঠে বা পুকুর ধারে গিয়ে অনেক খোঁজাখুঁজি করলেও তাকে খুঁজে পায়নি। গ্রামবাসীদের কাছেও এই খবর গিয়ে পৌঁছায়। সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমেও ওই মহিলা’র ছবি পোস্ট করে পরিবারের তরফে আবেদন জানানো হয়, সন্ধান দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে, পুলিশ কর্মী স্বামী ডিউটি থেকে রাত্রি ১১ টা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছন। খোঁজাখুঁজি আরো বাড়ে! তবে পাওয়া যায়নি রাত পর্যন্ত। অবশেষে, আজ সকালে পরিবারের লোকেরা এলাকার বড় বাঁধের কাছে গৃহবধূর জুতো জোড়া খুঁজে পান! কিছুক্ষণ পর ওই বাঁধের জলে ভাসতে দেখেন গৃহবধূকে। এলাকাবাসীরা এসে মৃতদেহ বাঁধ থেকে তোলেন। ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হয় শালবনী থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই ঘটনাটিকে পরিবারের তরফে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করা হলেও, গ্রামবাসীরা (অর্থাৎ গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দা) এটিকে ‘পরিকল্পিত খুন’ বলছেন। একই অভিযোগ করলেন, ওই মহিলার বাপের বাড়ির লোকজনও। তাঁদের পক্ষ থেকে শালবনী থানায় এফআইআর করা হবে বলে জানা গেল। রঘুনাথপুর (মহিলার শ্বশুরবাড়ি) গ্রামের এক বাসিন্দা বললেন, “৪-৫ বছর হল বিয়ে হয়েছিল জয়ন্ত ও মোনালিসার। ৩ বছরের একটি ছেলেও আছে। প্রথম থেকেই ওই গৃহবধূর উপর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন অত্যাচার করত। স্বামীর সঙ্গেও গত ১-২ বছর বনিবনা হচ্ছিল না! তাই, কিছুদিন মেদিনীপুরে ভাড়া বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে গেলেও, বছরখানেক হল পুনরায়, রঘুনাথপুরে গ্রামের বাড়িতেই রেখে গিয়েছিল। নিজে সপ্তাহে দু’একদিন করে আসতো। ওই গৃহবধূকে গ্রামের অন্য কোনো পরিবারের সাথে মিশতে দেওয়া বা কথাবার্তা বলতেও দেওয়া হতো না! এমনকি, নিজের সন্তানের সঙ্গেও মিশতে দেওয়া হতো না! গ্রামবাসীদের বলা হতো মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু, বিষয়টি আদৌও তা নয়, অত্যাচারের খবর যাতে না বলতে পারে, সেজন্যই এই রকম করা হত।”
জানা গেছে, জয়ন্ত মাইতির দাদা (অর্থাৎ মেয়েটির ভাশুর) স্থানীয় তৃণমূল নেতা ও ঠিকাদার। এলাকায় মোটামুটি প্রভাব ছিল। এদিকে স্বামী এএসআই মর্যাদার পুলিশ কর্মী। তাই, মেয়েটির উপর অত্যাচার করলেও কেউ প্রতিবাদ জানাতে পারতনা! মেয়েটির বাপের বাড়ির তরফ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, “আত্মহত্যা বা জলে ডুবে মারা গেলে, মুখে ও সারা শরীরে কালশিটে কিভাবে পড়ল! গোটা মুখ রক্তাক্ত কেন? আমরা এর নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।”
এলাকাবাসীদেরও দাবি পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক। শালবনী থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এফআইআর হোক, সেইমতো তদন্ত করা হবে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এই ঘটনায় ব্লক তৃনমূল কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্ব জানিয়েছে, “যে দলের সঙ্গে যুক্ত হোক না কেন, খুন বা আত্মহত্যা যাই হোক না কেন, আমাদেরও দাবি পুলিশ নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করুক। কেউ যদি দোষী হয়, তার উপযুক্ত শাস্তি পাক।”
2
previous post