বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : আলিপুর সংশোধনাগারের পর এবার মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে তৈরি হল মিউজিয়াম। যেখানে কতজন স্বাধীনতা সংগ্রামী কিভাবে ছিলেন, তাদের কি সাজা হয়েছিল৷ কতজনকে কোথায় ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল সেইসব বিপ্লবী আন্দোলন ও কারাবন্দি সংগ্রামীদের জীবনগাথা তুলে ধরা হয়েছে সেই মিউজিয়ামে। শনিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে সেই মিউজিয়ামের ৷ জেলখানা মানেই মানুষের মনে এক ধরনের ভয়, আতঙ্ক, রহস্য রয়েছে। অথচ প্রাচীর দিয়ে ঘিরে রাখা জেলের ভেতরে পুরোনো নানা ইতিহাসও লুকিয়ে রয়েছে ৷ মেদিনীপুর জেল তথা কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সেই সব দিক থেকে দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে ৬ জন বাংলার বিপ্লবীকে ফাঁসি দিয়েছিল ইংরেজ শাসক। ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার সেই ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এই কারাগারের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৮৬০ সালে, এবং ১৮৬৮ সালে এর আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠা হয়। পরে ১৮৭২ সালে এটি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের স্বীকৃতি পায়। দক্ষিণবঙ্গের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারাগার হিসেবে তখনই খ্যাতি লাভ করে এই প্রতিষ্ঠান।
আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ
ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন :
For WhatsApp Group : Click Here

আরও পড়ুন : হাতিতে ক্ষতিগ্রস্ত জমি দেখতে গিয়ে আহত স্ত্রী, পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেন স্বামী
মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রথম ফাঁসি দেওয়া হয় বিপ্লবী প্রদ্যোৎ কুমার ভট্টাচার্যকে। অত্যাচারী ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ডগলাস হত্যা অভিযানে যুক্ত থাকার অভিযোগে ১৯৩৩ সালের ১২ জানুয়ারি মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে প্রদ্যোৎ ভট্টাচার্যকে প্রথম ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। ওই বছরই আরেকজন ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বার্জকে ফুটফল মাঠে খেলার সময় ঢুকে হত্যা করার অভিযোগে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল ব্রজকিশোর চক্রবর্তীকে। তারিখটা ছিল, ১৯৩৪ সালের ২৫ অক্টোবর। সেকারনেই এই দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল মিউজিয়াম উদ্বোধনের দিন হিসেবে। একই দিনে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল বিপ্লবী রামকৃষ্ণ রায়কে। এছাড়াও পরদিন ২৬ অক্টোবর একই অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয় নির্মল জীবন ঘোষকে।

এছাড়াও চট্টগ্রামের পল্টন মাঠে ব্রিটিশদের উপর হামলা চালানোর ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে বিপ্লবী হরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও বিপ্লবী কৃষ্ণচন্দ্র চৌধুরীকে ১৯৩৪ সালেই ৫ জুন ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশধনাগারের ফাঁসি মঞ্চে। জানা গিয়েছে, বর্তমান সংশোধনাগার সুপার বিনোদ কুমার সিং ও ওয়েলফেয়ার অফিসার অনিরুদ্ধ ঘোষ-এর উদ্যোগে এই ঐতিহাসিক বিষয়গুলি মিউজিয়ামে সংরক্ষন করে রাখার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল৷ সংশোধনাগারের প্রবেশদ্বারের উল্টোদিকে থাকা ‘কর্নেল এম. এ. সিং গার্ড ভবন’-কেই সংস্কার করে মিউজিয়াম হিসেবে সাজানো হয়েছে। ১৯৪০ সালে নির্মিত এই ভবনটি প্রায় ভেঙে পড়ার মুখে ছিল। উৎসাহী নাগরিক ও ইতিহাসপ্রেমীদের সহযোগিতায় ভবনটি পুনর্গঠন করা হচ্ছে। বর্তমানে দ্রুতগতিতে চলছে সাজসজ্জার কাজ।

এক আধিকারিক বলেন, “আমরা চেয়েছি মানুষ যেন মেদিনীপুর সংশোধনাগারের ইতিহাস জানতে পারে। শুধু অপরাধী নয়, এই প্রাচীরের মধ্যে বন্দি ছিলেন অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁদের সংগ্রামের কাহিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।” মেদিনীপুর শহিদ প্রশস্তি সমিতির সদস্য ও নাড়াজোল রাজ কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক মঙ্গল নায়েক বলেন, “খুবই গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। সংশোধনাগার মানেই ভয় নয়, বরং এটি ইতিহাসের পাঠশালা। এখানে এমন অনেক তথ্য ও দলিল রয়েছে যা গবেষকদেরও কাজে লাগবে। আলিপুর ও আন্দামানের পর মেদিনীপুরে এমন একটি মিউজিয়াম তৈরি হওয়া গর্বের বিষয়।”

মিউজিয়ামে থাকবে “বিশ সেল” ও “দু’শো সেল”-এর তথ্য ও ছবি, ব্রিটিশদের বিভিন্ন রকমের নির্যাতনের চিত্র, বন্দিদের নানা তথ্য, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবনবৃত্তান্ত দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন ৷ কীভাবে চট্টগ্রামের বন্দিদের মেদিনীপুরে নিয়ে এসে রাখা হত, এবং তাদের কারাবাসের বাস্তব চিত্র কেমন ছিল সবটাই দেখা যাবে মিউজিয়ামে রাখা ছবি ও তথ্যের মধ্যে।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Historic prison
Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspape