পত্রিকা প্রতিনিধি: মেদিনীপুর শহরের বুকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবথেকে ভয়াবহ বিপর্যয় এবং সুদীর্ঘ উদ্ধার কার্য! শেষ কবে মেদিনীপুর শহর এত বড় বিপর্যয় দেখেছে মনে করতে পারছে না। মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা (২:৩০) নাগাদ ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায়, বুধবার ভোর সাড়ে চারটা (৪:৪৫) নাগাদ উদ্ধার করা সম্ভব হয়, দ্বিতীয় ও সর্বশেষ মৃতদেহ। শ্রমিক রাম সরেনের (৫০) প্রায় অস্তিত্বহীন দেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় এনডিআরএফ (The national disaster response force)। তিনি গড়বেতার আউশাবাঁধি এলাকার বাসিন্দা। তার কয়েকঘন্টা আগে (বুধবার ভোর ৩ টে নাগাদ) গড়বেতার রঘুনাথপুর গ্রামের বছর ২৩ এর শ্রমিক শুভদীপ প্রামাণিকের দেহ উদ্ধার করে এনডিআরএফ। শুভদীপ এই ভবন সংস্কারের কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিলেন। আইটিআই পাশ করা শুভদীপ বাবা-মা’র একমাত্র পুত্র ছিলেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকার্যের সময় উপস্থিত থাকা তাঁর মাসতুতো দাদা উৎপল পাল। শুভদীপের একমাত্র দিদি’র বিয়ে হয়ে গেছে। স্বভাবতই, ভয়াবহ এই বিপর্যয়ে শুভদীপের পরিবার ও গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে!
মঙ্গলবার দুপুর ২ টো-২.৩০ টা নাগাদ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের শতাব্দী প্রাচীন জরাজীর্ণ বাড়ি থেকে নবনির্মিত ভবনে (বছর পাঁচেক হল শুরু হয়েছে) কিছু জিনিসপত্র সরিয়ে আনার কাজ করছিলেন প্রায় ২৫ জন শ্রমিক। চুক্তিভিত্তিক কাজে নিয়োজিত এই শ্রমিকদের বেশিরভাগ জনই গড়বেতা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। হঠাৎ গতকাল দুপুর আড়াইটা নাগাদ প্রবল বৃষ্টির সময় হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে জরাজীর্ণ ওই বাড়ি। বাড়ির পেছনের দরজার কাছাকাছি যাঁরা ছিলেন, তাঁরা বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। চারজন চাপা পড়ে যান। তারমধ্যে দু’জনকে দেখতে পান বাকি শ্রমিকেরা। দমকল কর্মীদের তৎপরতায় দ্রুত তাদের উদ্ধার করে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছিল বিকেল ৪ টা নাগাদ। এরপর, দমকল বাহিনী এবং রাজ্যের উদ্ধারকারী দল প্রায় ৮ ঘন্টা (রাত ১২ টা পর্যন্ত) ধরে উদ্ধার কার্য চালিয়ে গেলেও অবশিষ্ট ২ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রাত্রি প্রায় ১২ টা থেকে ৫ ঘন্টার প্রচেষ্টায় বাকি দু’জনকে উদ্ধার করে এনডিআরএফ বাহিনী। এই সুদীর্ঘ উদ্ধারকার্যে প্রথম থেকেই উপস্থিত ছিলেন, জেলা পুলিশের শীর্ষ স্তরের আধিকারিক থেকে শুরু করে, ভূমি রাজস্ব দপ্তরের আধিকারিকরা। কোতোয়ালি থানার পুলিশ এবং মেদিনীপুর দমকল বাহিনীর কর্মীরাও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন! তবে, এনডিআরএফ বাহিনী আরো দ্রুত এলে হয়তো ওই দুই শ্রমিককে আরো দ্রুত উদ্ধার করা যেত বলে মনে করছেন তাঁদের পরিজনেরা। এনডিআরএফ বাহিনীর পক্ষে জানানো হয়েছে, তাঁরা ঘাটালে ছিলেন, সন্ধ্যা নাগাদ খবর পাওয়ার পর তাঁরা রওনা দেন। দুটি মৃতদেহ তাঁরা উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন। পুলিশের পক্ষে জানানো হয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সে করে দুটি মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়েছে। শহরবাসী বলছেন, সত্যি এত বড় বিপর্যয় মেদিনীপুরের বুকে অনেকদিন পর নেমে এলো!