শুভম সিং:কাঁথি:পূর্ব মেদিনীপুরঃ একের পর এক বড়সড় অভিযানের পরিকল্পনা করছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।তবে তার বিশ্ব লড়াই করছে মহামারীর বিরুদ্ধে। কিন্তু থেমে নেই বিজ্ঞানরা।গত ৩০ শে জুলাই নাসার তরফ থেকে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্য পাঠানো হলো একটি মাইক্রোচিপ।
কবি বলেন, নামে কী আসে-যায়। অনেক কিছুই যে আসে-যায়, তা উপলব্ধি করতে পারছেন সৌভিক। বুঝতে পারছেন, আসে-যায় অনেক কিছু, যদি সেই নাম যায় মঙ্গলের মতো ভিন্ গ্রহ অভিযানে। বেশ উত্তেজিত শোনাল তাঁর গলা। ২০২১ সালের ১৮ ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার মঙ্গলে পাড়ি দিচ্ছেন তিনি। সশরীরে নয়। কিন্তু নামে।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ১ ব্লকের কচুয়া গ্ৰামের বাসিন্দা, মধ্যবিত্ত ঘরের বাঙালি যুবক সৌভিক পন্ডা।পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার।তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে বায়ো গ্যাসের সুব্যবহার কিভাবে করা যায় তার কাজ করছেন। তবে বছরখানেক আগে নাসা জানায়, যাঁরা মঙ্গলে যেতে চান, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করাতে হবে।কাঁথিতে বসে সৌভিক জানান, তিনি যেতে চান। তাঁর নাম, ঠিকানা, ই-মেল যাচাই করে নাসা জানিয়ে দেয়, মঙ্গলযাত্রার তারিখ ২০২১সালের ১৮ ই জুলাই।
নাম পাঠানোর পরে নাসা তার নাম ঠিকানা ও মেল যাচাই করে রীতিমতো বোর্ডিং কার্ড পাঠিয়ে দেয় সৌভিকের কাছে। নাসা তাঁকে মেল করে জানিয়েছে, একটি মাইক্রো চিপে থাকবে তাঁর নাম ও ঠিকানা। বৃহস্পতিবার রওনা হয়ে ওই মঙ্গলযান ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলের মাটি ছোঁবে। সেই মাইক্রো চিপ রেখে আসা হবে মঙ্গলে। ইতিহাস হয়ে যাবে কাঁথির সৌভিকের নাম।
একা সৌভিক নয়। এমন প্রায় ১ কোটি ৯ লক্ষ্য ৩২ হাজার ২৯৫ জনের নাম থাকবে মোট তিনটি মাইক্রোচিপে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উৎসাহীরা নাসার কাছে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আরও ভারতীয়, এমনকি সৌভিকের মতো আরও বঙ্গসন্তানের থাকার সম্ভাবনা আছে। কারা তাঁরা? প্রশ্ন করায় নাসা থেকে সৌভিক’কে জানানো হয়, আর কারা যাচ্ছেন, তা গোপন রাখা হচ্ছে। কোনও যাত্রীকেই সহযাত্রীর নাম জানানো সম্ভব নয়।
নামে নামে মঙ্গল সফরের পাশাপাশি ওই গ্রহে সত্যি সত্যি মানুষ পাঠানোর কাজও ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছে নাসা। প্রথম দফায় তার জন্য ছয় মহিলা-সহ মোট ১৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
তাঁদের মধ্যে অবশ্য কোনও বঙ্গসন্তান নেই। ওই ১৩ জনকে এর মাঝখানে চাঁদের কক্ষপথে ঘুরিয়ে আনা হবে। ২০৩০ সালে তাঁদের মঙ্গলের মাটিতে পা দেওয়ার কথা। তার আগে, ২০২৬ সালে মঙ্গল অভিযানে ফের নথিভুক্ত করা হবে সাধারণ মানুষের নাম।
তবে সশরীরে সফর না-হোক, নাম তো যাচ্ছে। কেমন লাগছে? এ প্রশ্নে সৌভিক পন্ডা বলেন,“আমি ৫ থেকে ৬ বছর ধরে মঙ্গল অভিযানে অংশগ্রহণ করার চেষ্টা করছি।তবে পৃথিবীর মাটি থেকে উঠে যে-মহাকাশযান মঙ্গলে পাড়ি দিল, সেখানে কোথাও আমার নাম থাকছে— ভাবতেই রোমাঞ্চ হচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমিও যেন এই অভিযানে শামিল হয়ে গিয়েছি! এর আগে মঙ্গল অভিযান করে ব্যর্থ হয়েছে বহু দেশ। ভারতও। নাসার এই অভিযান যাতে সফল হয়, তার জন্য প্রার্থনা করব আমি,” বললেন কাঁথির যুবক।
তবে শুধু সৌভিক নয়, সৌভিকের মতো মঙ্গলযাত্রায় নাম লেখানো এক কোটি ৯’লক্ষ ৩২ হাজার ২৯৫ জনের প্রার্থনাও নাসার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।