রঞ্জন চন্দ: করোনা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।বাধা হয়েছে শিক্ষকদের কাছে।বিদ্যালয়ে চাকুরিরত শিক্ষকের মাইনে টাকা আসছে মাসে মাসে,কিন্তু বিপাকে আর্থিক অভাবে গৃহশিক্ষকেরা।৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস।ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের জন্ম দিবস।যে দিনটাকে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস হিসবে। teachersday, teachersday, teachersday, teachersday, medinipur news, celebration of teachers day, biplabi sabyasachi news, bengal news
আরও পড়ুন- কার্টুন দেখানোর প্রলোভন দেখিয়ে ৭ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ মামাতো ভাগ্না বিরুদ্ধে
শিক্ষার অন্যতম প্রানপুরুষ,ছাত্রছাত্রীদের দ্বিতীয় অভিভাবক হলেন শিক্ষক।কিন্তু করোনা আবহে শিক্ষাদাতা সেই গৃহ শিক্ষক আজ অর্থ সংকটে।বিদ্যালয় বন্ধ,বন্ধ টিউশন।ছাত্রছাত্রীদের কথা ভেবে সেই সকল গৃহ শিক্ষকেরা বাড়িতে থেকে অনলাইনে পড়ুয়াদের পড়িয়ে চলেছেন।বেতনে যেখানে বাধা হয়েছে শিক্ষকদের কাছে।গৃহ শিক্ষক শান্তনু জানা বলেন-“বর্তমানে চাকুরি পরীক্ষা না হওয়ার কারণে বাড়ি বাড়িতে কিংবা কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের ব্যাচ পড়িয়ে দিন চলে।কিন্তু করোনা সংক্রমন কালে সেই অফলাইন টিউশন ব্যবস্থা বন্ধ।পড়াশুনা অনলাইনে হলেও তা নিমিত্ত মাত্র।ফলে ছাত্র সংখ্যা কম এবং বেতন সমস্যার কারণে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।”
গৃহ শিক্ষকরা আর্থিক ভাবে একেবারে বিপর্যস্ত এই সময়। দীর্ঘ ছয়মাস ধরে লকডাউন চলায়,পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ার কারণে বন্ধ অফলাইন সব টিউশন।অনেকেই ঘর ভাড়া মেটাতে পারছেন না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়াও হচ্ছে না। একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সেই গৃহ শিক্ষকেরা।তবে অনলাইনে পড়াশুনা তে অসুবিধা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের।মাধ্যমিক উত্তীর্ণ বেলদার ছাত্রী সৃজা কর্মকার জানিয়েছেন-” করোনার কারণে স্কুল টিউশন বন্ধ।বেলদা সহ পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত বাড়ছে।কিন্তু স্কুল বন্ধের জন্য অনলাইনে সব করতে হচ্ছে।কিন্তু অনলাইন পড়াশুনার ক্ষেত্রে আমাদের কখন বুঝতে কখন শুনতে অসুবিধা হচ্ছে তেমনি নেট না থাকলে পড়া করা যাচ্ছে না।তবে গৃহ শিক্ষকেরা তাদের মতো করে যথেষ্ট সাহায্য করে চলেছেন।আমরা চাই অফলাইন পড়াশুনা শুরু হোক যেখানে আমাদের বোঝার ক্ষেত্রে বা বাহ্যিক পরিবেশে পড়াশুনা করা যাবে।
অফলাইনে পড়াশুনা করানো যাচ্ছে না।টিউশন পড়িয়ে আয় ও প্রায় বন্ধ সেই ডিসেম্বর থেকে।আত্মসম্মানের কারনে কোনও ভাবেই ত্রাণের লাইনেও দাঁড়াতে পারেন না গৃহ শিক্ষকেরা। অপরের কাছ থেকে সাহায্য নিতেও কুণ্ঠিত। কিন্তু একমাত্র গৃহ শিক্ষকতার ওপরেই দিন গুজরান করতে হয় তাদের। বঞ্চিত স্কুল শিক্ষক ও সরকারের পক্ষ থেকেও। শিক্ষিত বেকারদের উপার্জনের পথ অনেকেই গৃহশিক্ষকতাকেই বেছে নেন। অথচ নানা সমস্যায় জর্জরিত তারা। বিশেষ করে এই লকডাউনে। বন্ধ হয়েছে টিউশন। মিলছে না টিউশন ফি। অনেক পরিবার কঠিন সময়েও পড়াতে যেতে ‘না’ বলে দিয়েছেন।বেলদা এলাকার এক গৃহ শিক্ষক সমির দাস জানিয়েছেন-“করোনা সময়ে টিউশন পড়াতে আসতে না বলে দিয়েছেন অভিভাবেরা।যার উপর ভিত করে সংসার চলে তাও বন্ধ হয়েছে।যেদিকে নজর নেই প্রশাসন থেকে কারোরই।”
লকডাউনে টিউশন বন্ধ,অনলাইনে পড়িয়ে তেমনভাবে আদায় হয়না টিউশন ফি।যার কারনেই নাকি পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতির সদস্য ঘাটালের অনুপ মাইতি গত মার্চ মাস থেকে টিউশন ফি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে আত্মহত্যার (১৮ মে) পথ বেছে নিয়েছেন বলেই খবর সামনে এসেছে। শুধু তাই নয়, পরের দিনও আরও এক গৃহশিক্ষক বীরভূম জেলা থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জা্যগায় অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর উঠে এসেছে। আরও অনেকেই এই পথ বেছে নিতে পারেন বলেই আশঙ্কা।
গৃহ শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবি আদায়ের জন্য গড়ে উঠেছে সংগঠনও। জেলা, রাজ্য ও ব্লক কমিটি গৃহ শিক্ষকদের নিয়ে আন্দোলন করেছেন। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন তারা। নারায়ণগড় ব্লক আন এমপ্লয়েড টিচার্স এসোসিয়েশনের এক সদস্য গৃহ শিক্ষক সুশান্ত পানিগ্রাহী জানান,” লকডাউনে মদের দোকান খুলে সামাজিক দূরত্ব বিধির ঘটনা আমরা দেখছি। অথচ বেকার গৃহ শিক্ষকেরা কেন সামাজিক দূরত্ব বিধি মেনে টিউশন পড়াতে পারবেন না ! সরকার কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। শিক্ষিত বেকারেরা কী এভাবেই বঞ্চিত হয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেবে ?”
অভিযোগ এই সময়ে টিউশন বন্ধ থাকায় অনেক পরিবার গৃহ শিক্ষকদের মাসোহারা দেননি।
অনেকেই গৃহ শিক্ষকদের ওপর নির্ভরশীল। গ্রামাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল শিক্ষিকদের থেকে কম ফি নেওয়া গৃহ শিক্ষকদের ওপর নির্ভর করতে হয়।
ছাত্ররাও এই সময় সরকারকে গৃহশিক্ষকদের পাশে দাঁড়ানোর কথাই ব্যক্ত করছে।নারায়ণগড়ের এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সহেলি সাহু জানান-“বর্তমানে ছেলেমেয়েদের কথা ভেবে বাড়ির বাবা মা এরা নিজেদের সন্তান কে বাইরে বেরোতে দিচ্ছেন না।বাধা পড়ছে টিউশন আসাতেও।কিন্তু এটা ঠিক যে সব শিক্ষকেরা আমাদের পড়ান,সেই শিক্ষকরাও এখন কষ্টে।সেন্টার থেকে বাড়িতে গিয়ে পড়ানো প্রায় বন্ধ।ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি গৃহ শিক্ষকদের কথা ভাবা প্রয়োজন সরকারের॥”
গৃহশিক্ষকদের ওপর নির্ভর ছাত্রছাত্রীদের।স্কুল শিক্ষক, তারা সরকারি বেতন পান। গৃহশিক্ষকদের পাশে থাকা দরকার সরকারের। আর এই লকডাউন পিরিয়ডে নানা প্যাকেজের ঘোষণা হচ্ছে। সেখানে গৃহশিক্ষকেরা কেন অন্তর্ভুক্ত হবেন না? প্রশ্ন ছাত্রছাত্রীদের ও।তবে শিক্ষক দিবসেও আবহেলায় রাধাকৃষ্ণণ এর প্রিয় সেই শিক্ষকেরা।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi