Indigenous peoples
পত্রিকা প্রতিনিধিঃ : দুই ভাই আর মা নিয়ে সংসার। বাবা গত হয়েছেন কবে সালটা বলতে না পারলেও আনুমানিক পনেরো কুড়ি বছর আগে। কাঞ্চন (KANCHAN) আর ঝাড়েশ্বর (Jhareswar) কিস্কু দুই ভাই স্কুলের পড়াশোনা কতটা? জানেন না। বয়স যখন দশ কি বারো বছর ঠিক সেই সময় থেকে অন্যের বাড়িতে বাগাল থাকতেন। তখন বাবা জীবিত। বাড়িতে অভাব। বাবা ও মা দুজনেই অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করতেন। আর বাড়ি বলতে ছিল বাঁশ দিয়ে মাটির দেওয়াল আর খড়ের ছাউনি। প্রতি বর্ষার জলে ছাউনির খড় পচে গেলে আবার পাল্টে দিতেন। এভাবেই চলে সংসার। দুই ভাই মিলে তখন হয়তো বছরে দু’হাজার টাকা পেত। সেই টাকাতেই ঘর সারানো হতো। সঙ্গে রয়েছে জামাকাপড়, অসুখ বিসুখ। আবার বিয়ে হয়ে যাওয়া দিদির শ্বশুরবাড়ির অনুষ্ঠানেরও খরচ ছিল। খুবই কষ্টের মধ্যে দিনযাপন। একসময় বাবার শরীর খারাপ হওয়ায় বাড়ির ছাউনি দিতেও টাকা জোটেনি তাঁদের। সরকারে তখন বামফ্রন্ট। কোনোরকমে বলে মিলেছে ইন্দিরা আবাস যোজনা (Indira awaas Yojana) প্রকল্পে বাড়ি। মায়ের বয়স হচ্ছে। সেভাবে কাজ করতে পারে না। তখনও দুই ভাই অন্যের বাড়িতে বাগাল হিসেবে কাজ করতেন। সরকারী টাকায় পাওয়া বাড়ি পাঁচ ইঞ্চির ইঁট সিমেন্টের দেওয়াল অর্ধেক উঠেই থেমে যায়। এদিকে মাটির বাড়িও ভেঙে পড়েছে। আর বাড়ি করতে পারেন নি। সরকারী প্রকল্পের (Government Project) বাড়ি তৈরির পুরো টাকাও পাননি বলে অভিযোগ ঝাড়েশ্বরের (jhareswar)। পরে বাগালের কাজ ছেড়ে দিয়ে দুই ভাই বাড়ি ফিরেন। নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে যান প্রায় দিন। বাড়ি তৈরির বাকি টাকা পাওয়ার জন্য। কিন্তু আজও অধরা। রাজ্যের পরিবর্তন হয়েছে সরকারের। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যও তৃণমূলের পরে এখন বিজেপির (BJP)। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।
দিনে ত্রিপলের নিচে রান্না করা, রাতে অন্যের বাড়িতে ঘুমানো। এভাবেই বছরের পর বছর কাটে এই আদিবাসী পরিবারের। মা বেশিরভাগ দিন থাকেন বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য হপনাম টুডুর বাড়িতে। দুই ভাই যেদিন যার খুশি বাড়ি বা বাড়ির বারান্দায় দিন কাটান। তবে রাজ্যে উন্নয়নের দাবিদার যতই করুক শাসক দলগুলি। সেই উন্নয়ন হয়তো চারিদিকে কৃষি জমি, গাছপালা, কংসাবতী নদীর নির্মল হাওয়া বাতাসের মাঝে এই আদিবাসী পরিবারে পৌঁছাতে পারে নি! হ্যাঁ। এমনি ঘটনা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মনিদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের টিকরপাড়া এলাকায়। শুধু বাড়ি নয় বহু ক্রোশ দূরে রয়েছে এই পরিবার রেশন সামগ্রী পাওয়া থেকেও। আগে নাকি পুরনো কার্ডে রেশন পেতেন। ডিজিটাল কার্ড না থাকায় রেশন পাননি এখন। রেশন কার্ড তৈরির সময় খবরও পাননি বলে অভিযোগ। জনপ্রতিনিধিরাও হয়তো বলেন নি। তবে প্রতিবারে নিয়মমতো ভোট দিতে ভুলেননি। ভুলেননি বললে ভুল হবে, ভুলতে দেন না রাজনৈতিক দল সহ জনপ্রতিনিধিরা। ভোটের কার্ড সহ বিভিন্ন কাগজও থাকে অন্যের বাড়িতে।
আদিবাসী পরিবারের এই অবস্থার কথাও পৌঁছাওনি পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতির দপ্তরে। প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই নড়ে বসলেন। পঞ্চায়েত দপ্তর থেকে পাঠালেন খোঁজ খবর নিতে। তবে ‘যশ’ এর ঝড়ে জুটেছিল একটা ত্রিপল। মেদিনীপুর সদর (Medinipur sadar) পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শ্রাবন্তী মন্ডল (shrabanti Mondal) জানিয়েছেন, ‘বিষয়টা জানা ছিল না। খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেব। লিস্টে নাম থাকুক বা না থাকুক বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।’ সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ গোপাল দে (Gopal Dey)আশ্বাস দিয়েছেন, আধার কার্ড থাকলে আগামী মাস থেকেই রেশন সামগ্রী যাতে পাই ওই পরিবার তিনি দেখবেন। ঝাড়েশ্বরের (jhareswar) মা ঠুরকি কিস্কু (Thurki kisku)এখন বাড়িতে নেই। তাঁর মেয়ের বাড়ি গিয়েছেন। কাগজ পত্র কোথায় আছে দুই ছেলে জানেন না। পঞ্চায়েত সদস্য হপনাম টুডু জানিয়েছেন, ভোটার কার্ড আছে, তবে আধার কার্ড সম্ভবত ওর মায়ের শুধু রয়েছে। বর্তমানে কৃষি জমিতে কাজ নেই। শহরেও কাজে যেতে পারছেন না করোনার বিধিনিষেধের জেরে। এখন ভরসা পাড়া প্রতিবেশীদের সাহায্য দেওয়া খাবার। রেশন কার্ড বা আধার কার্ড (Aadhar Card)কবে হবে জানি না। তবে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে মিলতে পারে রেশন সামগ্রী।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
Indigenous peoples
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper In Midnapore