পত্রিকা প্রতিনিধি : ঢাকে কাঠি পড়েছে,চারিদিকে পুজো পুজো রব।তবে পুজোর আগে ভালো নেই মালাকার পরিবারগুলো।করোনাসুরের তান্ডবে মুখ থুবড়ে পড়েছে মালাকারদের একমাত্র রুটি রোজগারের উপায়। Medinipur news, Medinipur news, Medinipur news, Coronavirous, Durga Puja
দাঁতন, কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়ে বেশ কয়েকটি পরিবার আছে মালাকারদের।কমবেশি শোলার গয়না, ঠাকুরের মেড় তৈরি করেই সারাটা বছর উপার্জন চলে তাদের। কিন্তু এবারে করোনা সব কেড়েছে।নেই তেমন উৎসব।প্রায় সাতটা মাস কেটেছে পুজো,সামাজিক রীতি অনুষ্ঠান ছাড়া। ব্যস্ততা নেই মালাকার পাড়ায়। খাঁ খাঁ করছে ঘর। বাংলা বছর শুরুতেই বিক্রি না হওয়ায় বানানো জিনিস এখনও পড়েই আছে ঘরে। আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে কেশিয়াড়ির মনি, শংকর, বাসন্তী, শান্তি মালাকারদের। অর্থের লোকসানে জর্জরিত দাঁতনের অনন্ত মালাকার ও নারায়ণগড়ের কবিতা মালিদের।
আরও পড়ুন- গোপীবল্লভপুরে ফসলের ক্ষেতে হাতির তাণ্ডব,দুশ্চিন্তায় কৃষক
প্রসঙ্গত কেশিয়াড়ি সর্বমঙ্গলা মন্দিরের কাছেই বেশ কয়েকটি পরিবারের উপার্জনের ক্ষেত্র।ডাকের কাজ ও মেড় তৈরি করে চলে তাদের সংসার। বাংলার শিল্পে মেড় হল পট চিত্র। কেশিয়াড়িতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পটের পুজোর চল আছে।দুর্গাপুজার বিভিন্ন মন্ডপে থিমের কাজ ও হয় পটের উপর নির্ভর করে।কথিত আছে রাজা মুকুন্দ দেবের সময় কালে তৈরি সর্বমঙ্গলা মন্দিরকে কেন্দ্র করেই এই ডাক ও পটের নানা সরঞ্জাম বানানোর পেশা তৈরি হয়েছে। বংশপরম্পরায় এই কাজ করে আসছে মালাকার সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলো। প্রতিবছর পুজোর দেবি আহ্বানের আগে নাওয়া খাওয়া ভুলে কাজ চলত। পুকুরের জলজ শোলা এনে রোদে শুকিয়ে বিভিন্ন আকারে কাটা,রঙিন কাগজ কেটে তা চিটিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজ চলত জোরকদমে। এখন ব্যস্ততা নেই।ফাঁকা,শূন্যতা পরিবার গুলোতে। নেই বরাত। এইসময় ঘরের ছোট থেকে বড় সকলেই সারাবছরের উপার্জনের আশায় হাত লাগাতেন কাজে। শুধুই হতাশা পরিবারে। কেশিয়াড়ির মেড় শিল্পী শংকর মালাকার জানালেন,” এটাই একমাত্র ব্যবসা। এখনও কেউ বরাত দেয়নি। কীভাবে চলবে বুঝতে পারছি না।”
শংকরের মতোই একই কথা শোনালেন কেশিয়াড়ির মনি মালাকার। তিনিও দুর্গার মেড় তৈরি করেন। শতাধিক শীতলা মেড়। এবারে কিছুই বরাত নেই। তিনি জানান,” এখনও শীতলা মেড় তৈরি হয়ে পড়ে আছে। দুর্গার পট তৈরির বরাত পাইনি।”
দুর্গাপুজার প্রস্তুতি হিসেবে মালাকার দের কাজ শুরু হয় ফাল্গুন থেকেই। আবার কার্তিকে আরও এক মরশুম। লক্ষ্মীপুজোনকে ঘিরে তৈরী হত চাঁদমালা ঘের।এবারে তাও অনিশ্চিত।বেশিরভাগ পুজো বন্ধ হয়েছে করোনার কারণে।নিয়মরক্ষায় মূর্তি পুজার বদলে ঘটোুজা দিয়ে কাজ সারা হয়েছে। ফলে তৈরি সামগ্রী বাড়িতেই জমেছে। দুর্গা পুজোর জন্য নতুন কাজের বালাই নেই। দাঁতনের বেশ কয়েকটি মালাকার পরিবারের বাস। তাদের মধ্যে অনন্ত মালাকার এখন ডাকের গয়না, বিয়ের টোপর, ফুলের সাজ তৈরি করেন। বানান দুর্গা, শীতলা ও মনসার মেড়। আপাতত এবছর সে সব কিছুই হচ্ছে না। অনন্তরা নিজেরাই এলাকা ঘুরে শোলা খুঁজে আনেন। ফলে লাভ পান কিছুটা। আপাতত সেই লাভে ভাটা। নারায়ণগড়ের ফুলগেড়িয়া, আহারমুণ্ডাতে ডাকের তথা শোলার কাজ করেন এমন বেশ কয়েকটি পরিবার আছে। আহারমুণ্ডাতে আছেন মালি পরিবার। সংকট এদের পরিবারেও। এলাকায় পাঁচটি পরিবার শোলার গয়না থেকে যাবতীয় কাজ করেন। মন্দির, ফুলঘরা, মালা, মুকুট, চাঁদ মালা প্রভৃতি। বাদ যায় না শীতলা ও গনেশের মেড়। যদিও ইতিমধ্যেই কিনে রেখেছেন শোলা। যদি পুজো হয় তবে দ্রুত হাত চালিয়ে কাজ করতে পারবেন। আহারমুন্ডার বাসিন্দা কবিতা মালি বলেন,” ঘরে বসে আছি কোনও কাজ নেই। প্রায় পঁচিশবছর ধরে এই কাজ করছি। শোলা কিনে রেখেছি। সবটাই অনিশ্চিত।”
নারায়নগড়ের এই এলাকায় লোধা সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। তারাই এই সময় ঘুরে ঘুরে জলাশয় থেকে শোলা সংগ্রহ করে। দিয়ে যায় মালাকার ও মালিদের বাড়িতে। করোনা কালে শোলার কাজে ভাটা পড়ায় তারাও পড়েছেন সংকটে। কেশিয়াড়ি, দাঁতন, নারায়ণগড়ে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ডাকের কাজ চলে যায় জেলার বিভিন্ন প্রান্তে। জলাশয় কমে যাওয়ায় শোলার অপ্রতুলতা ছিলই। তাই তার জায়গা দখল করেছে থার্মোকল। ফলে ধুঁকছিল শিল্প এবং শিল্পী পরিবার। একদিকে নতুন প্রযুক্তিতে মার খাচ্ছে ডাক বা শোলার শিল্প অন্যদিকে করোনার কারণে বন্ধ কাজের বরাত।ফলে উভয় সংকটে আর্থিক টানে মালাকার পরিবার গুলি।কাউকেওবা অন্যকাজে যেতে হয়েছে সংসার টানার জন্য।রাজ্য সরকারের আর্থিক সাহায্যের দাবি জানিয়েছে এই শিল্পী পরিবার গুলি।
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasach