৩৩ তম বর্ষ, ২৮ সংখ্যা, ৩১ আগষ্ট ২০২০, ১৪ ভাদ্র ১৪২৭
করোনা মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পেয়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। কোথাও কোনও দুর্নীতির নালিশ এলে তার যথাযথ প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া জরুরি। তদন্তে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান ও দরকার। যাতে পুনরায় কোনও দুর্নীতির শেকড় গভীরে প্রবেশ করতে না পারে। তবে এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা হয় না বলেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। এখন যেমন করোনা সামগ্রী কেনায় দুর্নীতি নিয়ে বিরোধী দলগুলি সোচ্চার হয়ে উঠেছে। বিজেপির কৈলাস বিজয় বর্গীয় থেকে দিলীপ ঘোষ। সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বা কংগ্রেসের আব্দুল মান্না সবাই এই দুর্নীতি-কান্ডে রাজ্য সরকারকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছে। যদিও বিরোধীদের এই সোচ্চার কন্ঠকে মেনে নিতে পারেন নি মুখ্যমন্ত্রী। ২৪ আগষ্ট নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি বিরোধীদের এই সমালোচনাকে ‘কিছু লোকের ঘেউ ঘেউ’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর সাফ কথা সরকার পরিচালনায় এ রাজ্যের যে স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয় অন্য কোথাও হয় না। কোথাও কোনও অস্বচ্ছতার অভিযোগ উঠলে তা উপযুক্ত তদন্ত হয় এখানে। সুতরাং করোনা সামগ্রী কেনায় অনিয়মের অভিযোগেরও তদন্ত হচ্ছে এখানে। প্রসঙ্গ মমতা পি এম কেয়ার্স-এর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ঘটনা হল, মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুন, সরকারের প্রশাসনিক কোনও কাজে অনিয়মের অভভিযোগ উঠলে বিরোধীরা ‘ঘেউ ঘেউ’ করবেই। এটা বিরোধীদের গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যেই পড়ে। বাম জমানায় বিরোধী নেত্রী থাকার সময় তিনি নিজেও বাম সরকারের বিভিন্ন দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনায় টর্নেডো সৃষ্টি করেছিলেন। প্রশ্ন হল, তার সরকারের জমানায় বারংবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কেন দুর্নীতি বা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আবাস যোজনায় ঘর তৈরি থেকে উমপুনের ক্ষতিপূরণ, সিন্ডিকেট দুর্নীতি থেকে এখন করোনা সরঞ্জাম কেনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে স্বচ্ছ নেত্রী হিসেবে সুবিদিত হলেও তাঁর দল, তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই অনিয়ম ওঠায় সরকারের ও তাঁর দলেরই তো বদনাম হচ্ছে। স্বভাবতই বিরোধীরা এর সুযোগ নিচ্ছে। অন্দোলনে নেমে জনমত সংগঠিত করছে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর নিরন্ত্র চেষ্টা করা সত্বেও এখনও কোথাও কোথাও অনিয়মের যেসব শেকড় থেকে গিয়েছে তা উৎপাটন করা খুবই জরুরি।