৩২তম বর্ষ, ২৯৩ সংখ্যা, ২৯ মে ২০২০, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭
যে কোনও দেশের মূল লক্ষ্যই হল সাধারণ মানুষের অন্য-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো প্রাথমিক মৌলিক প্রয়োজনগুলি মেটানো। তারপরই আসে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। কোনও দেশের বা কোনও রাজ্যের ডাক বাজিয়ে যতই উন্নয়ন করা হোক না কেন, সবটাই নিষ্ফল হয় যায় যদি মানুষ না খেয়ে থাকে। স্বাধীনতার পর এখনও দু’বেলা পর্যাপ্ত খাবার জোটে না। তারাও কিন্তু ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিরা প্রান্তশ্রেনীর মানুষদের জন্য কতখানি ভাবিত থাকেন, তা বোঝা যায় স্বাধীনতার সাড়ে ছ’দশক পরও এদেশের দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করা নাগরিকদের না বদলানো পরিসংখ্যান দেখে। মানুষের মুখে অন্ন জোগানো সরকারের দায়িত্ব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তর থেকে তা অনুভব করেছেন। অনুভব করেছেন বলেই তাঁর কাজের মাধ্যমে প্রতিটি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার পাকাপাকি বন্দোবস্ত করে দিতে পেরেছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যথার্থই বুঝেছেন, রাজ্যের মানুষ যদি দু’বেলা পেটপুরে খেতে না পারে, যদি বছরের পর বছর অর্ধাহারে অপুষ্টিতে কালযাপন করতে থাকে তবে যাবতীয় উন্নয়নই নিষ্ফল হয় যায়। তাই ৩৪ বছর ধরে অনুন্নয়নে থমিকে রাখা বাংলার সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি এবার রাজ্যের কয়েককোটি মানুষের অন্ন জোগানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। রাজ্যের মানুষকে খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে চালু হয়েছে খাদ্য সাথী প্রকল্প। এই প্রকল্পের মাধ্যে রাজ্যের ৮২ শতাংশ মানুষ ঢুকে পড়েছেন রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা যোজনার আওতায়। প্রশ্ন আসতে পারে, কেন শুধু ৮২ শতাংশ মানুষকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হল? রাজ্যের সব মানুষকে নয় কেন? আসলে এই প্রকল্পের আওতায় আনার কথা দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারীদের। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের সঙ্গে নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্তদেরও এই সুরক্ষা যোজনায় সামিল করে দিলেন। বাদ বাকি উচ্চবিত্তের মানুষই কেবল এই প্রকল্পের বাইরে রয়ে গিয়েছেন। যারা মোটেই রেশন ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল নন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ বুঝেছেন, কেবল নিম্ন আয়ের মানুষজন নয়, বর্তমান বাজারে সংসার হিমশিম খেতে হচ্ছে মধ্যবিত্তদেরও। যেহেতু জীবনযাপনের আনুষঙ্গিক খরচ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে, বেড়েছে ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও, তাই কন্যাশ্রী, যুবশ্রী বা সবুজসাথী প্রকল্পের সাইকেল বিতরণেও কোনও ভেদাভেদ করা হয়নি। এই করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে রাজ্যে সরকার রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের জন্য পাঁচ কিলো করে চাল বরাদ্দ করেছে তা খুবই সদর্থক উদ্যোগ। আসলে এটাই মমতা হল মমতা ব্র্যান্ড। রাজ্যবাসী তা সবই দেখছেন।