বিপ্লবী সব্যসাচী পত্রিকা অনলাইন : বাবা অন্ধ, দু চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে, ক্লাস ফাইভ থেকেই সংসারের ভার কাঁধে তুলে নিয়ে, বাড়িতে বাড়িতে খবরের কাগজ ফেরি করে। আর সেই খবরের কাগজ ফেরি করেই মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতি প্রত্যন্ত গ্রাম্য এলাকার ছেলে দেবাঞ্জন।
আরও খবরের জন্য ক্লিক করুন… প্রতি মুহূর্তের লাইভ খবরের আপডেট পেতে ফলো করুন বিপ্লবী সব্যসাচী নিউজ
ঝটিতি খবর পেতে আমাদের WhatsApp গ্রুপে জয়েন করুন :
For WhatsApp Group 1: Click Here
For WhatsApp Group 2: Click Here
2. বয়স তার মেরে কেটে পনের থেকে ষোল বছর। কিন্তু সে প্রত্যহ সকাল থেকে বিদ্যালয়ে দেওয়া সাইকেল নিয়ে বের হয়, খবরের কাগজ নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে প্রতিটি বাড়িতে পৌঁছে দেয় সে। শীত হোক কিংবা বর্ষা বছরভর এটাই রুটিন তার। ঘরে অভাব অনটন লেগেই রয়েছে, বাবা চোখে দেখতে পায় না, মা অসুস্থ। বাড়িতে দিদি উপযুক্ত টাকার অভাবে এইচএস দিয়েই বন্ধ করে দিয়েছে পড়াশোনা, অন্ধ বাবা ও অসুস্থ মায়ের দেখাশুনা করে দিন কাটায়। দেবাঞ্জন এখন সংসারে একমাত্র ভরসা।
আরও পড়ুন : Stingray Fish : ২০০ কেজি ওজনের দৈত্যাকার শঙ্কর মাছ হলদিয়ায়, বিক্রি হল রেকর্ড দামে
আরও পড়ুন : Ambulance Accident : দাসপুরে অ্যাম্বুলেন্স লরির মুখোমুখি ধাক্কা! গুরুতর আহত একাধিক
3. সংসার চালাতে তাই বাবার পেশাই ভরসা তার। বাবাও বাড়িতে বাড়িতে বিলি করতেন খবরের কাগজ। দেবাঞ্জনের বাবা প্রায় বছর সাতেক আগে দুচোখে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন, সেই থেকে বাবার অসুস্থতার পর সেই পেপার বিলি করার হাল ধরেছে বছর ১৫ কিংবা ১৬ বছরের ছেলে দেবাঞ্জন। মাত্র একমাস পরে মাধ্যমিক পরীক্ষা, হয়তো পরীক্ষা দিন পর্যন্ত তাকে এই কাজ করে যেতে হবে। ঘরে আর্থিক অসচ্ছলতা, কোনভাবে টানটুন করে চলে সংসার কখনো বা না খেয়েই দিন যাপন করতে হয় পরিবারের সকলকে। সেই সঙ্গে গৃহশিক্ষক ও নেই তার, তবে হার মানেনি দেবাঞ্জন। মনের জোরেই প্রতিদিন 18 থেকে কুড়ি কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে খবরের কাগজ বিক্রি করে পরিবারের সকলের পেট চালায় সবং ব্লকের দশগ্রামের দেবাঞ্জন। এভাবে প্রস্তুতি নিয়ে মাধ্যমিক দেবে সে।
4. পেট বড় বালাই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সেই পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে সকালবেলায় খবরের কাগজ পাঠকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজ শুরু করে। এখনও সেই কাজে কোনও ছেদ পড়েনি। সংসার তো চালাতে হবে। আর এক মাস পর মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু তার চেয়েও বড় ‘পরীক্ষা’ অভাবী সংসারের জোয়াল টানা। সামনেই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা, যে সময়ে বেশি করে পড়াশোনায় মন দেওয়া জরুরী, তখন নির্দিষ্ট সময়ে খবরের কাগজ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দেবাঞ্জন ভুঁইয়া।
আরও পড়ুন : Road Accident : দাঁতন এলাকায় জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পর পর তিনটি গাড়ি,জখম চালক
আরও পড়ুন : Sexual Assault : ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীর শ্লীলতাহানি! অভিযুক্তের ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড
5. সবং ব্লকের দশগ্ৰাম গ্ৰাম পঞ্চায়েতের কোলন্দা গ্ৰামের বাসিন্দা দেবাঞ্জন। বিলকুয়া সপ্তগ্ৰাম হাই স্কুলের ছাত্র। রোজ সকালে এই খবরের কাগজ বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়ে সেখান থেকে রোজগারের অর্থে কোনোরকমে ডাল-ভাত খেয়ে দিন গুজরান হচ্ছে এই হতদরিদ্র পরিবারের। সকালে কাগজ বিলি করে বেলার দিকে বাড়িতে ফেরা। তারপর সময় বের করে পড়তে বসা। কোনও প্রাইভেট টিউশন নেই। নিজেই পড়ে। কিন্তু তারমধ্যেও পড়ার ফাঁকে বাড়ির কাজও তাকে করতে হয়। উপায় নেই। কারন বাবা এখন চোখে দেখতে পান না। মা রোগশয্যায়। ফলে পরিবারের দৈনন্দিন কাজ করতে হয় তাকে ও তার দিদিকে।
6. সামান্য ছিপ ছিপে চেহেরা। বয়সও নিতান্তই সামান্য। এই বয়সে সংসারের ভার তার কাঁধে। তবে সামনে তো পরীক্ষা। এরকমভাবে সকালে সংবাদপত্র বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে সময় তো নষ্ট হচ্ছে? তবে সেই উত্তর যেন অধরা সকলের কাছে। পড়ার চাপের থেকেও সাংসারিক চাপ আরও ভয়ংকর।আগে এই কাজটি দেবাঞ্জনের বাবা নিমাই ভুঁইয়া করতেন। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর এই কাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে তার মাধ্যমিক পড়ুয়া ছেলে। কয়েক বছর ধরে বাড়িতে বাড়িতে সংবাদপত্র বিলি করে আসছে সে।
7. তবে এই সংসারিক যন্ত্রণার মুক্তি কোথায়? তবে দেবাঞ্জন জানিয়েছে দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থ সাধক শিক্ষা সনদের প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান এর সহযোগিতায় পড়াশোনার জন্য বেশ কিছু বই সহ কখনো কখনো জামা কাপড়ের সহযোগিতা পায় দেবাঞ্জন, যদিও প্রধান শিক্ষক যুগল বাবু দেবাঞ্জন যে স্কুলে পড়াশোনা করে সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নন, সেইসঙ্গে এই সামনের একমাস যাতে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে, দেবাঞ্জনের কথা ভেবে প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান এর অনুমতিক্রমে দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থ সাধক শিক্ষা সদন এর হোস্টেলের বেশ কয়েকজন ছাত্র দেবাঞ্জনের পরীক্ষা চলাকালীন যাতে কোনরকম অসুবিধায় না পড়ে সেই কথা ভেবে পরীক্ষার ওই কয়েকদিন তার পত্রিকা বিলি করার ভার নিয়েছে। এবং দেবাঞ্জন বর্তমান যে স্কুলে পড়ে বিলকুয়া সপ্তগ্রাম হাইস্কুল এর প্রধান শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ মাইতি জানান দেবাঞ্জন এর পাশে আমরা রয়েছি তার এই চলার পথকে সাধুবাদও জানিয়েছেন। কিন্তু দেবাঞ্জন কি এই
স্বাচ্ছন্দ্যে পড়াশোনা করে এগিয়ে যেতে পারবে? সেই প্রশ্ন সকলের।
আরও পড়ুন : Scam : মেসেজ করে টাকা চাইছেন কেশিয়াড়ির বিধায়ক! সতর্ক থাকুন, পুরোটাই ফাঁদ
আরও পড়ুন : Medinipur Hospital : মেদিনীপুর হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুতে ফের উত্তেজনা, তদন্তে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের টিম
লাইক করুন আমাদের ফেসবুক পেজ- https://www.facebook.com/biplabisabyasachi
The inspiring journey of a madhyamik student
– Biplabi Sabyasachi Largest Bengali Newspaper