পত্রিকা প্রতিনিধিঃ মানুষের খাবারের মধ্যে খুব সাধারণ উপকরণ হল ছাতু। তাই চৈত্র সংক্রান্তির দিনে সেটাকে উৎসর্গ করা হয় পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে। দলে দলে লোক এসে উপস্থিত হন সুবর্ণরেখার তীরে। পিতৃপুরুষকে স্মরণের এই রীতি উপলক্ষে নদীর তীরে বসে মেলাও। রীতি পালন এবং মেলা মিলে গোটা বিষয়টি ছাতু সংক্রান্তি মেলা নামে পরিচিত। কিন্তু এই রীতি বালিযাত্রা নামে পরিচিত। সুবর্ণরেখা নদী পূর্বে যেখানে বাংলা থেকে ওড়িশায় ঢুকেছে সেই সব স্থান থেকে ৬০-৬২ কিলোমিটার দূরে করবনিয়ার মূল বালিযাত্রার স্থানে সকলে আসতে পারেন না বলে নদীর তীরে নানা স্থানে ছোট ছোট বালিযাত্রা মেলা হয়।
তাই প্রতি বছর এই দিনটিতে গরতপুর, সোনাকানিয়া এবং বেলমূলাতে, কেশিয়াড়ির ভসরাঘাটে এবং ওড়িশার জলেশ্বরের রাজঘাট ও মাকড়িয়ায় সুবর্ণরেখা নদীর তীরে চৈত্র সংক্রান্তির দিনেই বালিযাত্রা মেলা বসে। তবে গত বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য এই মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। কিন্তু এবছর এই মেলায় মানুষের ঢল নামল। পাশাপাশি দুই রাজ্যের প্রায় ২০ টি গ্রামের জনগণের ভিড় পরিলক্ষিত হয় এই মেলায়। বালির প্রখর তাপ থেকে রেহাই পেতে সকাল থেকেই মেলা শুরু হয়। মেলায় সারিসারি দোকানপাটের সাথে নদীর তীরে তীরে চলে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান পর্ব। এই মেলার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল, এই মেলা কারো উদ্যোগে আয়োজিত হয় না। চিরাচরিত প্রথা মেনে সকাল সকাল নিজের নিয়মেই শুরু হয় আবার নিজের নিয়মেই মেলা শেষ হয় ।
প্রসঙ্গত, বালিযাত্রার অন্য এক তাৎপর্য রয়েছে। এর সঙ্গে মহাভারতের যোগ রয়েছে বলে লোকবিশ্বাস। সেই কাহিনিটি জানা যেতে পারে। অজ্ঞাতবাসের শেষে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে যুধিষ্ঠির বাৎসরিক পিতৃশ্রাদ্ধের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। কিন্তু, তার জন্য প্রয়োজন উত্তরবাহিনী গঙ্গা। তিনি তখন সুবর্ণরেখার অববাহিকা অঞ্চলে বাস করেন। সাহায্যে এগিয়ে এলেন অর্জুন। তিনি তির ছুড়লেন মাটিতে। মাটির নীচ থেকে মন্দাকিনীর ধারা এসে মিলিত হল সুবর্ণরেখায়। সুবর্ণরেখা হয়ে গেল উত্তরবাহিনী গঙ্গা। যুধিষ্ঠির নদীর তীরে বালির চরে বসে ছাতু দিয়ে পিতৃশ্রাদ্ধ করলেন। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম সীমানায় করবনিয়া গ্রামের কাছে আজও সুবর্ণরেখা নদী উত্তর বাহিনী। স্থানীয় বিশ্বাস, আজও এই অঞ্চলে সুবর্ণরেখা নদীর উভয় তীরে পাণ্ডবদের পিতৃশ্রাদ্ধের স্মরণে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে অনুষ্ঠিত হয় বালিযাত্রা মেলা।