৩৩ তম বর্ষ, ৩৫ সংখ্যা, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২১ ভাদ্র ১৪২৭
বেশ কিছুদিন ধরেই কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে বেহাল অর্থনীতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছেন অর্থনীতিবিদরা। এখন অর্থাৎ বছরের প্রথম তিন মাসেই জিডিপি প্রায় ২৪ শতাংশ সংকুচিত হওয়ায় ঐ সব অর্থনীতিবিদদের উষ্মার যৌক্তিকতা ফুটে উঠেছে। এছাড়াও বিভিন্ন আর্থিক সংস্থার মূল্যায়নে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থনীতির সাম্প্রতিক অবস্থা বলছে, কারখানা বা নির্মাণ শিল্প, হোটেল, পরিবহন যেখানে মানুষের বেশি রোজগারের সুযোগ থাকে সেখানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল করোনার কারণে এ বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত উৎপাদন শিল্পের বহর প্রায় ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে এবং খনিতেও সংকোচন প্রায় ২৫ শতাংশ। এসব ক্ষেত্রে চ্চাকরির বেশি সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং সংকট অতি ঘোরতর। বিশেষ করে বেকারত্বের করুণ দশা রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের। যাঁদের সামনে কর্মসংস্থানগত আলোর দিশা নেই, রয়েছে গোলক ধাঁধার পথ, উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্ন যেখানে অজানা আশঙ্কায় কুকড়ে থাকে, সেখানে স্বনির্ভয় হয়ে ওঠার পথ হয়ে ওঠে পিচ্ছিল। নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত যে কতখানি অযৌক্তিক ছিল তা ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে বিগত কয়েক বছর ধরেই। কেন্দ্র যেহেতু আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে, যুক্ত রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যগুলির যে কম বেশি আর্থিক সংকটের শিকার হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রাপ্য জি এস টি বা অন্যান্য খাতের টাকা না পেয়ে ইতিমধ্যেই কয়েকটি রাজ্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা করেছে। প্রশ্ন হল, এই যে জি ডি পি-র এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতি এবং ক্রমশ তা বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে, সেখানে কেন্দ্র কী করে দেশে ‘আচ্ছে দিন’ বা ‘সবকা সাথ, সক কা বিকাশ’-এর স্লোগান বাস্তবায়িত করবে সেই নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এক তো করোনা অতিমারির কারণে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় কোটি কোটি শ্রমিক সহ অন্যান্য পেশার কর্মীরা কাজ হারিয়ে ঘোরতর সঙ্কটে রয়েছেন। তার উপর গোদের উপর বিষফোঁড়া দেশের এই বেহাল অর্থনীতি। যদি এই অর্থনীতির বুনিয়াদ মজবুত থাকত তাহলে তা দিয়ে এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক-কর্মচারীদের ঘুরে দাঁড় করানো সম্ভব হত। কেন্দ্রীয় সরকার যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সেখানে তো এসব সঙ্কটাপন্ন মানুষদের জন্য তেমন উঠে দাঁড়ানোর দিশা নেই। লগ্নিকারীরা ও তো লগ্নি করা থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছেন। মানুষের হাতে পয়সা না থাকায় ঝিমিয়ে রয়েছে বাজার। সুতরাং কেন্দ্র যা বলছে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে-কিন্তু তা কোন যাদু বলে ?