রঞ্জন চন্দ: বিকেল হলেই চিৎকার কোলাহল কিচিরমিচির শব্দ।বাঁশ গাছের উপরে বসে সারি সারি বক।বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন রঙের বকের বাসা ছোট্ট কয়েকটা ডেসিমেল এলাকায় গাছের উপর।সন্ধ্যা হলে বকের শাবকের দিকে ঝাকে ঝাকে উড়ে আসে তাদের অভিভাবকেরা।পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ তাদের আলাপ-আলোচনায় মুখরিত হয় বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।কিচিরমিচির ডাক বাড়িয়ে তোলে বিকালের সৌন্দর্য্যকে।
সারি সারি বক। বাড়ির বাঁশ বাগানে থরে থরে বাসা। বহু নতুন অতিথি। বকের শব্দে সব সময় মুখর এলাকা। তবুও আছে শিকারীদের দৌরাত্ম।তবে তাদের রক্ষা করার কাজে ব্যস্ত কেশিয়াড়ি ব্লকের খাজরা পঞ্চায়েত এলাকার খাজরার বাসিন্দা অনাদি দাসের পরিবার। পরিবারটি জানাচ্ছে, এবছর নয়। গত কুড়ি বছর ধরে বিশেষ সময়ে তার বাড়ির বাগানে বকেরা ভিড় করে। সাদা, ধূসর, লালচে বকের ভীড়। পানকৌড়িও আছে তাদের পরিবারে। পরিযায়ী অতিথি তারা।সময় ক্র আসে আর ফিরেও চলে যায়।
প্রায় তিন-চার মাস ধরে এখানেই থাকে তারা। ডিম ফুটে বাচ্চা হলে তা বড় হওয়ার পরেই চলে যায়।চৈত্রের শেষ বা বৈশাখের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে আসতে শুরু করে। বাসা বানায় অনাদি বাবুর বাঁশ বাগানের উপর।ফিব্যি বেশ কয়েকমাস থাকে তারা।পক্ষি বিশেষজ্ঞ দের দাবি-ওগুলো সারস প্রজাতীর।যা সাধারণত ইস্টার্ন ক্যাটেল এগ্রেটস নামে পরিচিত।উষ্ণ ক্রান্তীয় এলাকায় থাকে এই সারস প্রজাতি গুলো।পরিযায়ী হিসেবে জলাশয়ের দিকে উড়ে আসে।কয়েকদিন থেকেই চলর যায়।এভাবে খাজরার এই গ্রামে দীর্ঘ ২০ বছর কয়েকটা মাস আসে তারা।
সারিবদ্ধ বকের বাসা থেকে উড়ে যাওয়া আবার ফিরে আসা দেখে অনেকেই মুগ্ধ হন। তবে পাখি শিকারী বা দুষ্ট লোকও আছে। তাদের বাসা ভেঙে ডিম নষ্ট করা থেকে ছানাদের মেরে ফেলার মতো কাজে যুক্ত হয়ে যায় অনেকেই। গুলতি ছোঁড়া বা বকেদের এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নানান চেষ্টা করলেও সফল হতে পারেনি পরিবারটির দাপটে। সময়ে সময়ে বন দফতরেরও সাহায্য নেয় পরিবারটি। উল্টে অভিযোগও যায় তাদের কাছে। তবে পরিবারের সকলে মিলে চালাব পাখিগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার কাজ। অনাদি পুজোর কাজ করেন, পুরোহিত। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রীও এই কাজে সহায়তা করেন।
কাছাকাছি তেমন কোনও বড় জলাশয় নেই, তবে কাছে কেলেঘাই নদী আছে। বিস্তৃত মাঠ থাকলেও কী কারনে গ্রামের ভেতর লোকালয়ে বাসা বানাতে প্রতিবছর চলে আসে বকগুলি ! জানা নেই পরিবারের। উত্তর অজানা বন দফতরেরও।
বকের কারনে এই তিন-চার মাস বাড়ির জলের কুঁয়ো ব্যবহার করতে পারে না পরিবারটি। দুর্গন্ধ ছড়ায় এলাকায়। তবুও এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে অনীহা পরিবারের। সজাগ দৃষ্টি থাকলেও শিকারীদের নিশানা থেকে বাঁচানো যায় না পাখিদের। বাঁশ বাগানের নীচে প্রতিদিন বক ও তার ছানাদের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এলাকা নোংরা হয়। গন্ধ ছড়ায়। তবু বকের বংশবৃদ্ধিতে কোনও কিছুই মানতে নারাজ পরিবারটি। একটি পরিবারই লড়াই চালাচ্ছেন। মাত্র তিন-চার মাস অনায়াসেই সমস্যা মেনে নেন। বাবা, দুই মেয়ে ও মা এ বিষয়ে সকলেই এককাট্টা। এজন্য প্রতিবেশিদের বাঁকা দৃষ্টির সম্মুখীন হতে হয়।
কেন আসে এই এলাকায় ! সদুত্তর দিতে পারেনি বন দফতরও। অনুকুল পরিবেশ নয়, তবুও কেন অনাদির বাঁশ বাগানে বকেরা ভিড় জমায়। কুড়ি বছর পরেও অজানা। তবে তাদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টাটাই এখন মুখ্য হয়েছে পরিবারটির কাছে।