পত্রিকা প্রতিনিধি:
শনিবার পুনরায় সেই ঘটনা ঘটল দাসপুর থানার বারাসত বাজার সংলগ্ন স্থানে।
সেচ দপ্তরের ঘোমড়াই খাল সংস্কার কাজের সময়ই তাসের ঘরের মতো হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো তিন তালা একটা সম্পূর্ণ ঘর।প্রত্যক্ষদর্শী বহু মানুষ তখন যেন চোখের সামনে সিনেমা দেখছে। কড়মড় আওয়াজের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নদী গর্ভে পুরো বাড়ীটা যেন হোঁচট খেয়ে আচমকা আছাড় খেয়ে পড়লো। জল আর কাদা ফুয়ারা হয়ে বাড়ীটাকে ধূঁয়াশা করে জড়িয়ে ধরলো মনে হবে। ততক্ষণে উপর দিকের দুটো তালা সহ তার চোরাকুঠি নদীর গর্তে মুখ থুবড়ে আর গ্রাউন্ড ফোর মানে নীচের তলাটি তার উপর আশ্রয় নিয়ে যেন শান্ত হলো। স্থানীয় মানুষই সেই দৃশ্য মোবাইল বন্দী করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন।
প্রত্যক্ষ দর্শী কার্তিক মন্ডল বলেন ভোর ছয়টার দিকে ঘরটি ছয় ইঞ্চি মতো হেলে পড়ে। ফাটল দেখা যায় দেওয়ালে। তারপরই আটটার দিকে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।
জানা যায় দাসপুর ২ নম্বর ব্লকের নিশ্চিন্তপুর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বারাসাত বাজারে খালের পাড়ে অবৈধ ভাবে নির্মান করতে দেয় তৃনমূলের ব্লক, অঞ্চল নেতারা। এমন তিনতলা বাড়ীটি শনিবার সকাল আটটার দিকে ভেঙে পড়ে। ভিতরে কোনো লোক না থাকায় প্রান ঘাতীর ঘটনা থেকে রক্ষা পায়। এই বাজারেই নগেন্দ্র সামন্তর বাড়ী রয়েছে। তার ছেলে নিমাই সামন্ত নেপালে সোনার দোকান রয়েছে। নিমাই সামন্ত শাষকদলের একনিষ্ঠ কর্মী। সেই সুবাদে এবং টাকার বিনিময়ে সরকারী জায়গায় তথা সড়ক রাস্তার ধারে ও ঘোমড়াই খালের বেশ কিছুটা অংশে পীলার তুলে এমন অট্টলিকা নির্মান করে। প্রতিটি ভোটে এই ঘরটিই তৃনমূলের নির্বাচনী দপ্তর হয়। তৃনমূলের ব্লক সভাপতি আশিষ হুতাইৎ, তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি, জেলা পরিষদ সদস্য তপন দত্ত, এলাকার তৃনমূলের অঞ্চল সভাপতিদের জন্য আড্ডা দেওয়ার জন্যও একটা রুম উপর তলায় ব্যাবহার করার জন্য বরাদ্দ ছিল। বেআইনি ভাবে নদীর গতিপথে আর সড়ক রাস্তার ধারে ফুটপাত দখল করে এমন নির্মান হলেও প্রসাশন ছিল নীরব।
সেই ঘোমড়াই খালের সংস্কার গত আট দশ দিন ধরে চলছে। শুরু হয় মহিষঘাটা মৌজার জেলে পাড়া থেকে। প্রায় তিন কিমি সংস্কারের কাজ চলবে পায়রাশি মৌজা পর্যন্ত। সেই সংস্কারের কাজ গত কাল ঐ বারাসাত বাজার সংলগ্ন ঘোমড়াই খালে হয়। ঘরটির নীচ দিয়ে নদীর জল বয়ে যায় বর্ষাকালে। খননের সময় এমন ঘরটির যে বিপদ হবে তা প্রসাশন থেকে সতর্ক করেনি বলে বাড়ীর লোকের বক্তব্য। শুক্রবার রাতেই বাড়িটি হেলতে থাকে। তখনই বাড়ীর মধ্যে থাকা লোক সবাই সরে পড়েন নিরাপদ আশ্রয়ে। নীচতলায় ভাড়ায় চারটি দোকান ছিল। প্রায় ২০ লক্ষ টাকার মার্বেল পাথর মজুদ ছিল নদীর দিকে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে এক ব্যাবসায়ীর। এছাড়া গ্রিল, আলমারী কারখানা ও একটি স্টুডিও ছিল। কম্পিউটার সরিয়ে নিতে পারলেও বাকী প্রায় কোটী টাকার জিনিস পত্র ঐ ভেঙে পড়া ঘরের মধ্যে। মজুদ মার্বেল পাথর ভেঙে তচনচ হওয়ায় তার ডাস্টের গুড়ো ও জল কাদা ঘটনাস্থলকে ধোঁয়াশা করে তোলে।
ঘটনাস্থলে স্থানীয় তৃনমূলের প্রধান জয়শ্রী হাজরা ও তার স্বামী বুথ সভাপতি সত্যনারায়ন হাজরা, অঞ্চল সভাপতি তপন সাহু এলে স্থানীয় মানুষ কটাক্ষ করে বলেন টাকার জোরে কতকি হয় বলুন। আপনারাই তো এমন দখলদারী করিয়ে বেআইনি নির্মান করতে দিয়েছেন। পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি অনুমোদন দেয় কি করে নদীর উপর ও তার বাঁধের উপর এত বড় অট্টালিকা তৈরী করতে।
গত নভেম্বর মাসেই এই দাসপুর ২ ব্লকের পলালপাই খাল সংস্কারের সময় চকসুলতান মৌজায় হঠাৎ করে নদীর পাড় ভেঙে পড়ায় দুটি বাড়ী ভেমে পড়ে। তাতে এক ব্যাক্তির মৃত্যু সহ আরোও দুজন আহত হয়। আর তার আগে সেপ্টেম্বর মাসে ঐ চক সুলতানে পলাশপাই খালের উপর ৩৩ লক্ষ টাকায় নির্মিত কাঠের সেতুটি চালুর ১১ মাসের মধ্যে ভেঙে পড়েছিল। এমনই অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিত খাল খনন করার জন্য। সেচ দপ্তরের স্থানীয় অাধিকারীকদের বক্তব্য ছিল ৩৩ কোটী টাকা হলেই খাল পাড় বাঁধাই করা সহ সংস্কার করা যায়। কিন্তু সেচ দপ্তর এর হেড কোয়াটার ৭৮ কোটী টাকা বরাদ্দ করে সেই কাজের। পাড় বাঁধাই না করে এখনকার মতো মেসিন দিয়ে নদীর পাড় ঘেঁসে মাটি তুলে নেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যে সেই মাটি,এবং নদীর পাড় ধ্বস নিয়ে নদী গর্ভে চলে যায়। এমন ঘটনা এর আগে বার তিনেক ঘটেছে এই দাসপুরে। এলাকার মানুষের অভিযোগ এমন খাল গুলিতে অক্টোেবর মাস থেকে জল থাকে না। অথচ সেই সংস্কারের কাজ বর্ষার মুখে শুরু করে। ফলে জল পূর্ন খালে ভুয়ো হিসাব দেখানোর অভিযোগ তুলেছেন সাধারন মানুষ।