৩২তম বর্ষ, ২৯৬ সংখ্যা , ১জুন ২০২০, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৭
রাজনীতিতে এটাই বাস্তব। স্বাভাবিক বিষয়। গণতান্ত্রিক অধিকারও। যে দল কেন্দ্র কিংবা রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে যেন তেন প্রকারে সেই শাসকগোষ্টীকে ক্ষমতার চ্যুত করে বিরোধীরা ক্ষমতা দখলের মরিয়া প্রচেষ্টা চালাবে এটাই দস্তুর। ক্ষমতা স্বাদ পেতে কার না ইচ্ছা হয়। বিরোধীদের কৌশলই হল সরকার পক্ষের যাবতীয় কাজকর্মের মধ্যে ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে তা জনতার দরবারে উপস্থাপিত করে ক্ষমতা দখলের পথ প্রশস্ত করা। এরাজ্যের বিজেপির কর্মকর্তারা সেই প্রচেষ্টা করে চলেছেন বিগত অনেকদিন ধরেই। এই কৌশলকে কাজে লাগিয়ে গত লোকসভা নির্বাচনে অনেকখানি সফলও হয়েছেন তাঁরা। এবার সামনে মেগা নির্বাচন, বিধানসভা নির্বাচন, তাই এখন থেকেই সরকারের ছিদ্র খুঁজে বের করে করে নাকি বিকল্প সরকার গঠনে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য বিজেপি। সর্বশেষ খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের ৯ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁদের বিরুদ্ধে ৯ দফা চার্জশিট পেশ করছে বিজেপি। যে চার্জশিটের ছত্রে ছত্রে থেকে যাচ্ছে তৃণমূল সরকারের নানা ব্যর্থতা। শাসক দলের কারও কারও বক্তব্য হল, মিঠায় ক্ষমতার খোয়াব দেখছে বিজেপি। এ রাজ্যের মানুষ মমতাকে চান, তাই তাঁরা তৃণমূলকেই ক্ষমতায় আনবে। ঘটনা হল গণতন্ত্রের যাত্রাপথে সব বিরোধী দলি স্বপ্ন দেখে ক্ষমতার কুর্সিতে আরোহণ করার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রাও একসময় খোয়াব দেখেছিলেন সিপিএম জমানার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতায় বসার। তার আগে এই স্বপ্নে বিভোর হয়েই’ ৭৭ সালে জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল। দিল্লিতেও এমন তো কত উদাহরণ। ঐ ১৯৭৭ সালেই ক্ষমতার ‘খোয়াব’ দেখে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেসকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বে জনতা পার্টি। ১৯৮৯এ বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-দের জনতা দল রাজীব গান্ধীর কংগ্রেসকে সরিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। ক্ষমতার খোয়াবের এই পথেই একদিন ২০০৪-এ বিজেপির এন ডি এ কে হারিয়ে কংগ্রেস জোট, ২০১৪তে কংগ্রেসের এই ইউ পি এ জোট কে ধরাশায়ী করে নরেন্দ্র মোদীর ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হয়। এখনও অব্যাহত। এমন উদাহরণ ভারতীয় রাজনীতিতে বিস্তর। সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতা চ্যুত করার স্বপন দেখাটা তো দিলীপ ঘোষদের কোনও বাড়াবাড়ি নয়। এটা তো রাজনীতির কেমন সূত্র। ক্ষমতার জন্য লম্ফ ঝম্ফ সবাই করতেই পারে, মূল বিচারক তো জনতা জনার্দন। মমতার সরকার যদি রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি বলে রাজ্যের সিংহভাগ মানুষ মনে করেন তবে তাঁরা বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএম যে কোনও দলের বিকল্প সরকার আনতেই পারেন। রাজনীতির রঙও বৈচিত্র তো এখানেই।