মেষ : এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ মঙ্গল। এই রাশির ব্যক্তি ছোটবেলা থেকেই তেজস্বী, স্পষ্টবক্তা ও নির্ভীক প্রকৃতির হয়ে থাকে। নানা রকম রোমাঞ্চকর কাজ, সাহসিকতার কাজ করতে পারলে খুব আনন্দিত হয়। গুরুজন ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের প্রতি ভক্তিযুক্ত। কাজ বা কথার সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। পরিশ্রমি তবে কায়িক শ্রমের চেয়ে মস্তিষ্কের শ্রমেই বেশি সফল। এরা খুব তোষামোদ প্রিয় ও বন্ধুবৎসল। তবে সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মিশতে পারে না। আবেগ প্রকাশ বা নিজেকে বড় করে দেখবার চেষ্টা এদের খুব বেশি। এরা সব বিষয়ে বড় হতে ও নেতৃত্ব করতে হয়।
বৃষ : এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ শুক্র। এই রাশির ব্যক্তিরা সাধারণত সুন্দরের পূজারী ও শিল্পরসিক হয়ে থাকে। বিপরীত লিঙ্গের মন সহজে জয় করতে পারে ও একাধিক মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে। এরা মনে প্রাণে সর্বদা উচ্চ ভাব সম্পন্ন। নিজের প্রতিভায় সবার উপরে সহজেই আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়। আত্মীয় সজনের জন্য প্রচুর ত্যাগ স্বীকার করে থাকে। এদের জীবনে উত্থান পতন খুব কম। দীর্ঘসুত্রিতা এদের চরিত্রের এক বিশেষ ধর্ম। ফলে জীবনের অনেক ভাল সুযোগ নষ্ট করে। এরা প্রায়ই তীক্ষ্ণ বুদ্ধির, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ও ধৈর্যশীল হয়ে থাকে।
মিথুন: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ বুধ। বুধ চঞ্চলমতি, উদ্যমী বালক গ্রহ। বালকের মতোই এর কার্যকরিতা এই রাশির ব্যক্তিদের উপর সেই ভাবে প্রতিফলিত হয়। এদের মেধা শক্তি তীক্ষ্ণ, তবে এরা অস্থিরমনা এবং নরম গরম ভাবযুক্ত। এরা চিন্তাশীল কিন্তু বাচাল। এদের মনের মধ্যে একই সঙ্গে দ্বিবিধ ভাবের খেলা চলে। একই সঙ্গে কাউকে ভালবাসে, আবার ঘৃণাও করে। কখনও বিশ্বাস করে তো কখনও সন্দেহ করে। কখনও কৃপণ আবার কখনও আর্থিক ভাবে উদার। কখনও কুটিল, কখনও সরল। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ভাবুকতা এদের এক বৈশিষ্ট্য।
কর্কট: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ চন্দ্র। এই ব্যক্তিরা সচরাচর কল্পনা প্রিয়, শিল্পী, ভাবপ্রবণ ও রোম্যান্টিক ধরনের হয়ে থাকে। বিলাসি অথচ আদর্শবাদী। আত্মকেন্দ্রিক অথচ স্পর্শকাতর। দিনের চেয়ে রাত বেশি প্রিয়। ঠান্ডা জিনিস এদের প্রিয়। ভ্রমণ বিলাসী ও বাবা মায়ের ভক্ত হয়। দোষের মধ্যে একটু খুঁতখুঁতে চঞ্চল ও ভীতু, সব বিষয়ে হুড়োহুড়ি করা ও চঞ্চল প্রকৃতির হয়। ব্যবসা বুদ্ধি জন্মগত, তাই চাকরির চেয়ে ব্যবসাতেই জাতক বেশি উন্নতি করে। বিশেষ করে সাদা ও তরল দ্রব্যের, জলজ দ্রব্য বা খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা করলে খুব লাভবান হতে পারে।
সিংহ: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ রবি। এই রাশির ব্যক্তিরা প্রায়ই দৈহিক সৌন্দর্য যুক্ত হয়ে থাকে। দেহ রোগা মোটা বা দোহারা বা যাই হোক, পেশীবহুল হয়। সাধারণত শান্ত কিন্তু রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পরে। এরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, জেদি, পরাক্রমশীল, গম্ভীর ও দয়াবান হয়। নিজের চেষ্টায় জীবনে উন্নতি করে। লাল বা হলুদ রঙের দ্রব্যের ব্যবসা করলে শুভ। ইঞ্জিনিয়ারিং ও চিকিৎসা ব্যবসায় দ্রুত উন্নতি। উচ্চ রক্তচাপ, চোখের রোগ, পেটের রোগে ভোগান্তি হয়।
কন্যা: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ বুধ। বুধ প্রধান ব্যক্তি উদ্যমশীল, হাস্যকৌতুক ও আনন্দ প্রিয় হয়। স্বভাব চরিত্র সহজে বোঝা যায় না। আইনবিদ্যা, চিকিৎসা, রসায়ন বিজ্ঞান, গণিত ইত্যাদিতে প্রায়ই পটু হয়ে থাকে। ব্যবসা বাণিজ্যে উন্নতি করে। একা স্বাধীন ভাবে ব্যবসা করার চেয়ে যৌথ ব্যবসায় উন্নতি করে। সকলের জন্য চিন্তা করে তবে নিজের স্বার্থ ভাল বোঝে। মনের দু’টি পরপর বিপরীত ভাবের জন্য প্রায়ই উন্নতি ব্যাহত হয়। ব্যবসায়ী, প্রচারকর্তা, ওকালতি, এজেন্ট, জ্যোতিষী ইত্যাদি শুরু করলে জীবনে অবশ্যই উন্নতি করবে।
তুলা: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ শুক্র। এদের মধ্যে যে লক্ষণ সাধারণত দেখা যায়, তা হল— এরা খুব সৌন্দর্য ও ভোগবিলাস প্রিয়, ভাবপ্রবণ, বিজ্ঞ, রাজনীতিক, প্রখর অনুমান শক্তিসম্পন্ন ও প্রেমিক। চেষ্টা করলে এরা ভাল শিল্পী, গায়ক, চিত্রকর, সুরকার, সাহিত্যিক, নৃত্যশিল্পী, অভিনেতা প্রভৃতি হতে পারে। এদের স্বাস্থ্য ভাল, রোগব্যধি বিশেষ হয় না। এরা একটু নির্জনতাপ্রিয়। ভীরের চেয়ে একাকী থাকতে বেশি পছন্দ করে। এদের সহিষ্ণুতা ও ধৈর্য যথেষ্ট। জাতক শান্তি প্রিয় তবে ভিরু নয়। চাকরি অপেক্ষা ব্যবসা জাতকের পক্ষে বিশেষ ফলপ্রদ। জাতক সৎকর্ম পরায়ণ, বহু ভাষায় অভিজ্ঞ।
বৃশ্চিক: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ মঙ্গল। এই রাশির ব্যক্তি প্রায়ই তেজী, নির্ভীক এবং একগুঁয়ে প্রকৃতির হয়। নিজের মতে চলতে ভালবাসে। মঙ্গল প্রধান লোক প্রায়ই স্বেচ্ছাচারি, প্রভুত্বকামী হয়ে থাকে। মঙ্গল অশুভ হলে অহংকারী, দাঙ্গাবাজ ও গুন্ডা প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরা প্রায়ই প্রচুর ভু সম্পত্তি বা বাড়ির মালিক হয়। জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য ন্যায় অন্যায় বিচার করে না। পাইলট, সামরিক অফিসার, সৈনিক, পুলিশ অফিসার, পদস্থ সরকারি কর্মচারী, প্রভৃতি বৃত্তি অবলম্বন করলে জীবনে দ্রুত উন্নতি করবে।
ধনু: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ বৃহস্পতি। এই রাশির ব্যক্তিরা ধার্মিক, সৎ, পরোপকারী এবং আদর্শবাদী হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হওয়ায় অন্যের অধীনে কাজ করতে অসুবিধা ভোগ করে। এরা সধারণত কর্মকুশল, দেবদ্বিজে ভক্তিমান, দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সত্যপ্রিয়, জ্ঞানি ও প্রতিভাশালী হয়। এদের বন্ধু সংখ্যা একটু কম। জাতকের বদান্যতার জন্য আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়। দৈবে অত্যধিক বিশ্বাসী হওয়ায় কর্মে ব্যাঘাত আসতে পারে। বিষয় সম্পত্তিতে আসক্তি কম। দৃঢ়তা ও স্পষ্টবাদিতার জন্য প্রায়ই মতান্তর ঘটে। প্রথম জীবনে নানা বাধা বিঘ্ন, মানসিক অস্থিরতা, অর্থাভাব ইত্যাদি প্রায়ই দেখা দেয়। প্রচণ্ড পরিশ্রমী হওয়ায় অবস্থা পাল্টে যায়।
মকর: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ শনি। শনি গ্রহের জাতকদের নিঃসঙ্গ এবং একা থাকতে ভাল লাগে। অবসাদ, বিষাদ, বৈরাগ্য, উদাসিনতা ভাব এদের চরিত্রের বিশেষ লক্ষণ। বন্ধুরা সব সময় এদের এড়িয়ে চলতে চায়। এই রাশির ব্যক্তি সহিষ্ণু, পরিশ্রমী, জেদি, ঈশ্বরবিশ্বাসী ও পরোপকারী হয়। এরা সাধারণত অল্পে সন্তুষ্ট হয়। অকাল বার্ধক্যের একটি ছাপ প্রায়ই এদের চেহারায় দেখা যায়। এরা কখনও শ্রমশীল আবার কখনও শ্রম বিমুখ হয়। স্বাস্থ্য মোটামুটি ভাল হয়। তবে শেষ জীবনে হঠাৎ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। বিজ্ঞান, গণিত, যন্ত্রবিদ্যা, লোহা বা কয়লার ব্যবসা, টেকনিক্যাল কাজ, ইত্যাদি নিয়ে জীবনে এগোলে ফল ভাল হবে।
কুম্ভ: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ শনি। শনি গ্রহের জাতকরাও একা থাকতে ভালবাসে। অবসাদ, নৈরাশ্য, মনের অস্থিরতা, গুপ্তবিদ্যায় ঝোঁক, গণিত, জ্যোতিষ, বিজ্ঞান, প্রভৃতিতে পারদর্শী হয়। কালো কোনও দ্রব্যের ব্যবসায় সাফল্য। এই জাতক জাতিকারা ভাবুক, দার্শনিক ও ধর্মপরায়ণ হয়ে থাকে। সর্বদাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত থাকে এরা। প্রথম জীবনে প্রচুর কষ্ট পেলেও পরে সুখভোগ করে থাকে। এদের অন্তরে যোগীভাব প্রবল থাকে। সাধারণত ভাল স্বভাবের কিন্তু গ্রহ দোষ থাকলে খল ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে ওঠে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে চরিত্রের দোষে কুপথে যেতে দেখা যায়। বেশি ঝামেলা পছন্দ করে না।
মীন: এই রাশির অধিকর্তা গ্রহ বৃহস্পতি। এই রাশির জাতক জাতিকারা উদার, পরোপকারী ও সৎ হয়। স্বভাবে এরা নম্র, ন্যায়পরায়ণ ও ধার্মিক। প্রতিভা যথেষ্ট কিন্তু মানসিক অস্থিরতার জন্য ঠিকমতো বিকশিত হয় না। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে জীবনে অনেক বার বিপদে পড়তে হয়। এরা সাধারণত চিন্তাশীল ও খুব বিচক্ষণ হয়ে থাকে। কিন্তু বৃহস্পতি অশুভ থাকলে অবস্থা বিপরীত হয়। বন্ধুদের বেশির ভাগই হয় খল, দুষ্ট ও ধড়িবাজ প্রকৃতির। প্রেমের ক্ষেত্রে অসফল কিন্তু বৈবাহিক জীবন সুখের হয়। ভাগ্যে অনেক বাধা আসবে এবং সে সব সহজে দূর হবে না।