পত্রিকা প্রতিনিধি: স্ত্রী’র মৃত্যুর পর স্বামী কেশলালের মৃত্যু প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে! আজ শুভ জন্মাষ্টমী তিথিতে কেশলালের বড় ছেলে, দীপক বদলেকার বললেন, “আমার বাবা-মা’র প্রেম ছিল অত্যন্ত গভীর। একে অপরকে ছেড়ে থাকতে পারতেন না! তাই, মা এর মৃত্যুর এক ঘণ্টার মধ্যেই বাবাও চলে গেলেন। আমরা একেবারে বিধ্বস্ত, কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। আমরা অনাথ হয়ে গেলাম। তা সত্বেও বাবা-মা’র এই প্রেমের কথা আপনাদের কাছে প্রকাশ না করে থাকতে পারলাম না!”
গত ৮ ই আগস্ট, খড়্গপুর শহরের ৯ নং ওয়ার্ডের ভগবানপুর, নতুন শিবমন্দির এলাকার ৬৯ বছর বয়সী কেশলাল বদলেকার’কে ভর্তি করা হয় মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। তবে, পরিবার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে লিভারের সমস্যায় (লিভারে জল জমে গিয়েছিল) ভুগছিলেন তাঁর স্ত্রী। দুই ছেলে রোজগারের জন্য বাইরে বেরিয়ে গেলে, স্বামীই দেখাশোনা করতেন স্ত্রী। কিন্তু স্ত্রী’র শারীরিক অসুস্থতার কারণে, শেষের দিকে নিজেও শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ছিলেন কেশলাল। এরইমধ্যে, ৭ তারিখ থেকে ঈষৎ শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছিল, তাই ৮ আগস্ট তাঁকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করে দেন ছেলেরা। এদিকে, স্বামী’র অবর্তমানে স্ত্রী’র শারীরিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, তাই ৯ আগস্ট দুই ছেলে (একজন সেলসম্যান এবং অপরজন পেন্টার) মা’কেও ভর্তি করে দেন মেদিনীপুর মেডিক্যালে। ইতিমধ্যে, ওই ব্যক্তির লালারস সংগ্রহ করা হয় ৯ ই আগস্ট। এদিকে, ঐ দিনই গভীর রাতে, (তারিখ অনুযায়ী ১০ ই আগস্ট, গতকাল) অর্থাৎ রাত্রি ২ টো নাগাদ মৃত্যু হয় কেশলালের স্ত্রী’র। সন্তানদের খবর দেওয়া হয় এবং মৃতা’র অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হলে, রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এইসব করতে করতেই ঘন্টাখানেক চলে যায়, সেই সময়ই কেশলালের ছোট ছেলে বাবা’র খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারেন যে, কিছুক্ষণ আগেই তাঁর বাবা’র মৃত্যুও হয়েছে। কিন্তু, করোনা রিপোর্ট না আসায় বাবা’র দেহ দেওয়া হবেনা। গতকাল (১০ আগস্ট) দুপুরে দুই পুত্র ও পরিজনেরা মা এর মৃতদেহ নিয়ে এসে খরিদা মন্দিরতলা শ্মশানঘাটে দাহ করেন। এরপর রাত্রি নাগাদ তাঁরা জানতে পারেন, বাবা’র রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, বাবার দেহ দেওয়া হবেনা! বাবা-মা’কে একসঙ্গে হারিয়ে রীতিমতো বিধ্বস্ত ও শোকস্তব্ধ দুই পুত্র এও জানান, সরকারি নিয়মে বাবা’র দেহ তাঁদের দেওয়া হয়নি। তবে, ঐদিনই তাঁরা বাবা’কে দূর থেকে প্রণাম করে এসেছেন। হৃদয়ে গভীর বেদনা আর শোক নিয়েও, আজ জন্মাষ্টমী’র দিন এভাবেই এক আশ্চর্য প্রেমকাহিনী তুলে ধরলেন দুই পুত্র।