৩৩ তম বর্ষ, ৪২ সংখ্যা, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২৮ ভাদ্র ১৪২৭
যেভাবে কোভিড সংক্রমণ দেশে বা এ রাজ্যেও বিশাল প্রভাব বিস্তার করেহে তা রীতিমতো উদ্বেগজনক বিষয়। সেই কবে মার্চ এপ্রিল থেকে মরোনা ভাইরাসের ছোবল পড়েছে, এখনো দূরীভূত হওয়ার লক্ষণ নেই। বরং এই অদৃশ্য ভাইরাস ক্রমশ তার শক্তি বাড়াচ্ছে। নানা ধরণের চেহারায় সে নিজের থাবা বিস্তার করে চলেছে, ইতিমধ্যেই দেশে ৭৫ হাজারের মতো ময়ানুষ কোভিড সংক্রমণের বলি হয়েছে। প্রতি চব্বিশ ঘন্টায় হাজারের উপর মানুষের মৃত্যু মিছিল। এমন উদ্বেগজনক অবস্থা সত্বেও কেন্দ্রের মোদী সরকার সুস্থতার হার বৃদ্ধি নিয়ে ঢ্যাঁডরা পিটাচ্ছে কেবলই। কেন মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমশ লাখের দিকে এগিয়ে চলেছে সেই নিয়ে উদ্বেগ কম, উল্লসিত সুস্থতার হার বৃদ্ধি নিয়ে। আমাদের রাজ্যের পরিস্থিতিও কম উদ্বেগের নয়। এখনও পর্যন্ত ৩ হাজার ৮০০ জনের উপর রোগী মৃত্যুর কবলে পড়েছেন। প্রতিদিন জেলায় জেলায় সংক্রমণ বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। কেবল মাত্র পশ্চম মেদিনীপুর জেলাতেই গত ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭০ জন করোণার বলি হয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। তাই সঙ্কট ক্রমেই তীব্র হয়ে উঠেছে। রাজ্য সরকার সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেও সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করে চলেছে। মনে রাখা দরকার, এমন ভয়ঙ্কর ভাইরাস ও তার চরিত্র ক্রমশ জোটিল হয়ে উঠেছে। নানাধরণের উপসর্গ নিয়ে সবাই যাচ্ছেন হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে। কেউ হচ্ছেন পজিটিভ, কেউ নেগেটিভ। কারও স্থান হচ্ছে কোভিড হাসপাতালে, তো কারও সেফ হোমে বা হোম আইসোলেশনে। এখন পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিসরও বৃদ্ধি করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। একদিকে চলছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা, তো অন্যদিকে আর টি পি সি আর। এক্ষেত্রে সমস্যা দাঁড়িয়েছে অন্য। দেখা যাচ্চছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা ফলাফলের সঙ্গে আর টি পিসি আর-এর ফল মিলছে না। দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে কোনও ব্যাক্তি করোনা সংক্রমিত হলেও অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় তা ধরা পড়ছে না। এমঙ্কী সর্দি, কাশি, জ্বর বা শ্বাস কষ্টের মতো উপসর্গ থাকা সত্বেও অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় রিপোর্ট আসছে নেগেটিভ। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘ফলস নেগেটিভ’ বলা হচ্ছে। ঘটনা হল, এইসব মানুষ সংক্রমিত হওয়া সত্বেও অ্যান্টিজেনের নেগেটিভ রিপোর্ট মেনে যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং তাতে বাড়ছে সংক্রমণ। এমন চললে পরিস্থিতি বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছাবে। এসব ভেবেচিন্তেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য গবেষনা সংস্থা র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষার থেকেও আর টি পিসি আর পরীক্ষার উপর জোর দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দিয়েছে এই নির্দেশিকা। সুতরাং আমাদের রাজ্য সরকারেরও উচিত আই সি এম আর সংস্থার পরামর্শ মেনে পরীক্ষা ব্যবস্থায় বদল ঘটানো। সমস্যা যাই থাকুক, পরিস্থিতির ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে তা ব্যয় সাপেক্ষ হলেও করতেই হবে। করোনা হটাতে দরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করা।